All news

সাড়ে চার শ নারীর চোখে সচ্ছল আগামীর স্বপ্ন

সাড়ে চার শ নারীর চোখে সচ্ছল আগামীর স্বপ্ন

বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের সুদমুক্ত ঋণ বিতরণের ৭৫তম উদ্যোগে ৪৪৩ জন হতদরিদ্র নারী সুদমুক্ত ঋণ পেয়ে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন। গতকাল বুধবার এই নারীদের হাতে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা করে সুদমুক্ত ঋণ তুলে দেওয়া হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার এসব নারীর কেউ কেউ বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন থেকে তৃতীয়বারের মতো ঋণ নিয়েছেন। ২০ বছর ধরে বসুন্ধরা গ্রুপ নিয়মিত এই ঋণ বিতরণ কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।

গতকাল ভোরে প্রবল কুয়াশা পড়ায় ঋণ বিতরণের নির্ধারিত সময়ের কিছুটা ব্যতিক্রম হয়েছে। তবে ঋণ নিতে আসা নারীরা প্রকৃতির বৈরীভাব অতিক্রম করে ঠিকই হাজির হয়েছেন উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে। পরে গতকাল দুপুরে ঋণগ্রহীতা নারীদের হাতে ঋণের টাকা তুলে দেন অতিথিরা। গতকাল ৪৪৩ জন দরিদ্র নারীর মধ্যে মোট ৮০ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়।

বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের সুদমুক্ত এই ঋণ শুধু নারীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। ঋণের এই অর্থ দিয়ে নারীরা হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল পালন, শাক-সবজি চাষসহ ৩২ ধরনের কাজে বিনিয়োগ করে উপকারভোগী হচ্ছেন। শুরুতে ঋণ বিতরণের এই উদ্যোগ শুধু বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে তা পাশের হোমনা ও নবীনগর উপজেলায় বিস্তার লাভ করেছে।

গতকালের ঋণ বিতরণ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের সিইও এম নাসিমুল হাই (এফসিএস), ডিজিএম মাইমুন কবির, বসুন্ধরা শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, বাঞ্ছারামপুর সরকারি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. চাঁন মিয়া সরকার, সুদমুক্ত ঋণ বিতরণ প্রকল্পের ইনচার্জ মো. মোশাররফ হোসেন, সিনিয়র অফিসার আমির হোসেন আনোয়ার, জুনিয়র অফিসার শাহজাহান, আল মামুন, মোহাম্মদ বাছিরসহ বিশিষ্টজনরা।

ঋণের এই অর্থ যথাযথভাবে কাজে লাগাতে আহ্বান জানিয়েছেন অতিথিরা।
মধ্যনগর গ্রাম থেকে সুদমুক্ত ঋণ নিতে এসেছিলেন সাহিদা (২৯)। তিনি বলেন, ‘সংসারের কষ্ট দূর করতে আমার স্বামীর পাশাপাশি আমিও কিছু কাজ করমু ঠিক করছি। বসুন্ধরার টেহা দিয়া হাঁস-মুরগি পাইল্লা অনেকে লাভবান হইছে। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, বসুন্ধরার মালিকরা যেন ভালো থাকেন।’
আসাদনগর গ্রাম থেকে এসেছিলেন বিলকিস বেগম (৪০)। তিনি জানান, এই ঋণ নিয়ে তিনি কৃষিকাজ করবেন।

আর বাঞ্ছারামপুর সদর থেকে আসা মাকসুদা খাতুন (৩২) বলেন, ‘আগেও ঋণ নিয়া হাঁস-মুরগি পাইল্লা লাভবান অইছি। অহন আবার নিয়া কাজে লাগামু। বসুন্ধরা আছে দেইক্কা অহন আর আমার সংসার চালানোর চিন্তা নাই।’

বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের সিইও এম নাসিমুল হাই জানান, এর আগে আরো ৭৪ বার সুদ ও সার্ভিস চার্জমুক্ত ঋণ দেওয়া হয়েছে। এই সহযোগিতা চালু হওয়ার পর এ পর্যন্ত মোট ২৮ হাজার ১২৯ জন দরিদ্র নারীর হাতে ২৭ কোটি ১০ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা তুলে দেওয়া হয়েছে, যা স্বল্প হারে সাপ্তাহিক কিস্তিতে আদায় করা হয়। তিন মাস পর পর দরিদ্র নারীদের হাতে এ ধরনের আয়োজনের মাধ্যমে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রথমবার ১১৩ জন নারীকে ১৫ হাজার টাকা করে ১৬ লাখ ৯৫ হাজার টাকা, দ্বিতীয়বার ৬৯ জন নারীকে ১৫ হাজার টাকা করে আট লাখ ৮৫ হাজার টাকা এবং তৃতীয়বার ২৭১ জন নারীকে ২০ হাজার টাকা করে ৫৪ লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হয়।

নাসিমুল হাই বলেন, ‘হতদরিদ্র নারীদের আর্থিকভাবে সচ্ছল করার জন্য সুদ ও সার্ভিস চার্জমুক্ত এই ঋণ বিতরণ চালু করেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান মহোদয়। অসহায় অসচ্ছল নারীরা যেন নিজ পায়ে দাঁড়াতে পারেন সেই লক্ষ্যে ২০০৫ সালে এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। প্রকল্প শুরুর পর থেকে বসুন্ধরা গ্রুপ ধারাবাহিকভাবে হতদরিদ্র নারীদের কল্যাণে ঋণ বিতরণ করে চলেছে। নদীবিধৌত এলাকা বাঞ্ছারামপুরের দরিদ্র নারীরা ঋণ নিয়ে যেভাবে বিনিয়োগ করছেন, তাতে আর বেশিদিন তাঁদের অসচ্ছল থাকতে হবে না। তাঁদের সচ্ছল করে তোলাই বসুন্ধরা গ্রুপের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।’

SOURCE : কালের কণ্ঠ