All news

অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ পেল ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি

অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ পেল ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে দেশের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চলের অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ পেল বসুন্ধরা গ্রুপ। দেশের বৃহত্তম এই শিল্পগোষ্ঠীর অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের সঙ্গে সেখানে যৌথভাবে কাজ করবে সিকদার গ্রুপের পাওয়ারপ্যাক ও গ্যাসমিন লিমিটেড। এ জন্য ইস্ট ওয়েস্ট-পাওয়ারপ্যাক-গ্যাসমিন নামের একটি কনসোর্টিয়াম গঠন করা হয়েছে। তারা সেখানে ‘এসবিজি’ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করবে।

এটি হবে দেশের সর্ববৃহৎ শিল্প সিটি। এই কনসোর্টিয়ামের পক্ষ থেকে লিজ মানি হিসেবে গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেজা) ৪০ কোটি টাকার চেক হস্তান্তর করা হয়েছে।

গতকাল বিকেলে সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে এই তিন প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গঠিত এসবিজি কনসোর্টিয়ামকে আনুষ্ঠানিকভাবে লেটার অব অ্যাওয়ার্ড (এলওএ) প্রদান করেছে বেজা। এসবিজির পক্ষে তা গ্রহণ করেন কনসোর্টিয়ামের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাহাবুবুর রহমান।

বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব ও বর্তমানে সমন্বয়ক (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) আবুল কালাম আজাদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজিম উদ্দিন চৌধুরী ও বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোহা. হাবিবুর রহমান।

অনুষ্ঠান শেষে বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফিয়াত সোবহান সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা খুবই আনন্দের যে আমরা অর্থনৈতিক অঞ্চলটির অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ পেয়েছি।

সেখানে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে। সরকারের সহযোগিতায় আশা করছি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ শেষ হবে। আর বেজা এসব অঞ্চলে বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করবে, যার মাধ্যমে এসব অঞ্চলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে।’

লেটার অব অ্যাওয়ার্ডের মাধ্যমে এই কনসোর্টিয়াম আনুষ্ঠানিকভাবে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের ৫৫০ একর জমিতে অবকাঠামো উন্নয়ন, ডিজাইন ও নির্মাণ পরিচালনা করবে। তারা সেখানে পূর্ণাঙ্গ শিল্প-কারখানা গড়ে তুলবে।

পাশাপাশি শিল্প-কারখনায় বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি সংযোগ, অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণসহ সব ধরনের সেবা নিশ্চিত করবে। চাইলে তারা নিজেরাও সেখানে কারখানা করতে পারবে। কিংবা অন্য কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাছে প্লট বিক্রি করতে পারবে। জমি ব্যবহারের জন্য প্রতিবছর বেজাকে নির্দিষ্ট হারে ফি দিতে হবে।

তিন প্রতিষ্ঠান সুশৃঙ্খলভাবে অবকাঠামো নির্মাণ করতে সক্ষম হবে উল্লেখ করে আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ অঞ্চলটি তিনটি গ্রুপকে দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু একটি প্রতিষ্ঠানই এটি করার সক্ষমতা রাখে। কাজটি সুশৃঙ্খল ও সুষ্ঠুভাবে করতেই এভাবে দেওয়া হয়েছে।

আবুল কালাম আজাদ বলেন, মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল ২০১৮ সাল থেকে শিল্প উত্পাদনে যেতে পারবে। সে লক্ষ্যে নির্বাচিত ডেভেলপার কম্পানিগুলো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। এটি হবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু, যার জন্য সরকার সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়েছে। এখানে শতভাগ বিদ্যুৎ ও জ্বালানির নিরাপত্তা বিধান করা হবে। এতে করে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। তবে ইস্ট ওয়েস্ট-পাওয়ারপ্যাক-গ্যাসমিন কনসোর্টিয়ামের জন্য চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা। আশা করা হচ্ছে তারা সেটা করতে পারবে। এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কম্পানি তিনটি বিনিয়োগের অগ্রদূত হয়ে থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সাবেক এই মুখ্য সচিব আরো বলেন, মিরসরাইয়ে সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিদ্যুৎ ও জ্বালানির জোগান নিশ্চত করতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এরই মধ্যে গ্যাসের লাইন নির্মাণ শুরু হয়েছে। অন্যান্য কাজও যথাসময়েই হবে। বেজা ওয়ানস্টপ সার্ভিস দিচ্ছে। সেটি আরো সুদৃঢ় করতে এবং সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলো যেন সেবা দিতে বাধ্য থাকে এ জন্য আইন তৈরি করা হচ্ছে। খুব শিগগির তা মন্ত্রিসভায় উঠবে।

অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ পাওয়া কনসোর্টিয়ামের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, ‘আপনাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দ্রুত এগিয়ে চলা। ভয়ের কোনো কারণ নেই। দেশে এমন পরিমাণ বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে, যাতে চীনের ৫ শতাংশ বিনিয়োগ পেলেও জায়গা দিতে পারব না। ইতিমধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান আগ্রহ প্রকাশ করেছে।’ 

বেজার কর্মকাণ্ড তুলে ধরে নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচিত ডেভেলপাররা প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করলে মূল চুক্তি করা সম্ভব হবে এবং আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের প্রয়োজনীয় জমি বরাদ্দ দিয়ে উত্পাদনে যওয়া যাবে। বেজা এরই মধ্যে সুপেয় পানি সরবরাহ লাইন, বিদ্যুৎ সংযোগ ও সংযোগ সড়ক উন্নয়নের কাজ প্রায় শেষ করেছে। সার্বিক বিষয়ে জাইকা, বিশ্বব্যাংক ও এডিবির সঙ্গে কাজ করছে বেজা।

বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান আরো বলেন, মিরসরাই প্রথম পরিকল্পিত শহর হতে যাচ্ছে, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এ সময় তিনি অর্থনৈতিক অঞ্চল এলাকায় বিনিয়োগসংক্রান্ত তিনটি বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানান। সেগুলো হচ্ছে অর্থনৈতিক অঞ্চল এলাকায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীর জননিরাপত্তা নিশ্চিত, উন্নয়নকাজে যেকোনো ধরনের, বিশেষ করে স্থানীয় হস্তক্ষেপ বন্ধ ও সম্পদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তিনি এই এলাকায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানির নিশ্চয়তারও দাবি জানান।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজিম উদ্দিন চৌধুরী এবং বেপজার চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোহা. হাবিবুর রহমান।

কনসোর্টিয়ামের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহাবুবুর রহমান বলেন, বেজা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে সব কাজ বাস্তবায়ন করা হবে, যাতে ২০১৮ সালের মধ্যে বিনিয়োগকারীরা ব্যবসা শুরু করতে পারে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বেজার নির্বাহী সদস্য ড. এম এমদাদুল হক। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মইন উদ্দিন। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফিয়াত সোবহান, পাওয়ারপ্যাক ইকোনমিক জোনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রন হক সিকদার। দর্শক সারিতে উপস্থিত ছিলেন বেজার নির্বাহী সদস্য মো. হারুনুর রশীদ, হরিপ্রাসদ পাল, বেজার অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আইয়ুবসহ সরকারি-বেসরকারি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারা।

গতকাল একই স্থানে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভেতরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে বেজা ও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের মধ্যে চুক্তি সই হয়। এর অধীনে রুরাল পাওয়ার কম্পানি লিমিটেডকে ১৬ একর জমি দেওয়ার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ১৫ মাসের মধ্যে ডুয়েল ফুয়েল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। বেজার পক্ষে সমঝোতা স্মারকে সই করেন অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আইয়ুব ও বিপিডিসি-আরপিসিএল পাওয়ার জোন লিমিটেডের পক্ষে রুরাল পাওয়ার কম্পনি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুস সবুর।

SOURCE : কালের কণ্ঠ