মাটি আর সোনা কখনো পচে না। দামও কখনো কমে না। বরং সব সময় দাম বাড়ে। দেশে দীর্ঘদিন যারা জুয়েলারি শিল্পের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছেন, তাদের অভিজ্ঞতা অনেক বেশি। তবে এ অভিজ্ঞতা জুয়েলারি খাতের ট্রেডিংয়ের মধ্যেই বেশির ভাগ সীমাবদ্ধ। তারা জুয়েলারি খাতকে শিল্পায়নের দিকে বেশি এগিয়ে নিয়ে যাননি। অথচ বিশ্ববাজারে হাতে তৈরি সোনার অলংকার বা গহনার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা আশির দশকের প্রথমদিকে যখন রপ্তানি শুরু করেছিলেন, তখন হয়তো অনেকে কল্পনাও করেননি, পোশাক পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকবে। পোশাকশিল্পের এই অর্জনকে সাধুবাদ জানাই। পাশাপাশি এটাও দৃঢ়চিত্তে বলতে চাই- দেশের জুয়েলারি শিল্পে রয়েছে অমিত সম্ভাবনা। এ খাতের রপ্তানি পোশাকশিল্পকেও ছাড়িয়ে যাবে এটা আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। আমাদের সামনে জুয়েলারি খাতে যেমন বৃহৎ বিশ্ববাজার রয়েছে, তেমনি অভ্যন্তরীণ বা দেশীয় বাজারও আছে। সম্ভাবনার এই বাজার আগামীতে বড় হওয়া ছাড়া ছোট হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
সারা দেশে প্রায় ৪০ হাজার জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের প্রতি বলতে চাই- বাংলাদেশের জুয়েলারি শিল্পে পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যে কারখানা স্থাপনে বিনিয়োগের জন্য এখনই সুবর্ণ সময়। পাশাপাশি অন্যান্য রপ্তানিমুখী শিল্প খাতের যেসব অভিজ্ঞ উদ্যোক্তা রয়েছেন, তাদের প্রতি আমার আহ্বান- আসুন প্রায় শতবর্ষের অভিজ্ঞ জুয়েলারি খাতের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে রপ্তানিতে নতুন খাতের উন্মোচন করি।
বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের জুয়েলারি খাতে রপ্তানিমুখী কারখানা স্থাপনে ব্যাপক আগ্রহ প্রকাশ করছে। ইতোমধ্যে বিশ্বখ্যাত জুয়েলারি ব্র্যান্ড মালাবার বাংলাদেশে তাদের কারখানা স্থাপনের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করেছে। এ সম্ভাবনা উপলব্ধি করার অনুরোধ রইল বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের।
দেশের ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন-বাজুস জুয়েলারি খাতে কারখানা স্থাপনে আগ্রহী উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। আমরা জুয়েলারি খাতে আরও উন্নতি করতে চাই। কিন্তু জুয়েলারি শিল্পে অনেক প্রতিবন্ধকতাও আছে। এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করছি।
আশা করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনার মধ্য দিয়ে জুয়েলারি খাতের যত সমস্যা আছে, তা সমাধান হবে। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া এ খাতের উন্নতি হবে না। পাশাপাশি সারা দেশের জুয়েলার্সদের প্রতি আমার অনুরোধ- আপনারা সবাই জুয়েলারি কারখানা স্থাপনে নজর দিন। আপনারা যারা এত দিন ট্রেডিং করেছেন, তাদের এখন শিল্পায়নে মনোযোগ দেওয়ার সময় এসেছে।
আমরা এখন রপ্তানির দিকে যেতে চাই। সবাই একটা একটা করে কারখানা গড়ে তুলুন। আসুন রপ্তানি করে দেশকে সমৃদ্ধশালী করি। এই শিল্পকে আরও উন্নত করি। দেশে জুয়েলারি শিল্পের আরও প্রসার ও রপ্তানি ক্ষেত্রে বিকাশ ঘটাতে হবে। মূলত আমার লক্ষ্যটা থাকবে জুয়েলারি শিল্পের প্রসার। এক্ষেত্রে ভ্যাট ও কর সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের চেষ্টা করব। জুয়েলারি শিল্পে বাংলাদেশকে রপ্তানিকারক দেশে পরিণত করবই। জুয়েলারি পণ্য রপ্তানির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মহান স্থপতি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রত্যাশিত সোনার বাংলা গড়ার পথে আরও একধাপ এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে বাংলাদেশ।
আমি গত ২৮ জুন ভারতের গোয়ায় বাংলাদেশি জুয়েলার্সদের সম্মানে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী ‘সোনার বাংলা’ শীর্ষক জুয়েলারি এক্সপোতে যোগ দিয়েছিলাম। সেখানে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বলেছি- বাংলাদেশের আছে দক্ষ স্বর্ণশিল্পী আর ভারতের আছে দক্ষ ডিজাইনার। দুই দেশের এই দুই ধরনের সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে যৌথভাবে মার্কেটিং করতে পারব। প্রতিবেশী দুই দেশ সম্মিলিতভাবে কাজ করলে বিশ্বে জুয়েলারি শিল্পে সবার ওপরে থাকব। আমাদের কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।
আমার সঙ্গে একাধিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে ভারতের শীর্ষ জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে অলংকার বা গহনা তৈরির নতুন কারখানা স্থাপনে যৌথভাবে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তারা বাংলাদেশি কারিগরদের হাতে তৈরি গহনার প্রশংসাও করেছেন। ভারতের ব্যবসায়ীরা কারিগরি ও প্রযুক্তি সহায়তা দিয়ে এগিয়ে আসতে চান। জুয়েলারি খাতে বাংলাদেশ থেকে ভারত অনেক এগিয়ে আছে। বাংলাদেশ এখন মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। আমার প্রত্যাশা- ভারত আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশের প্রতি সহযোগিতার হাত প্রসারিত করুক। ভারতের জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে ম্যানুফ্যাকচারিং কারখানা করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছি। বাংলাদেশ ভারত একসঙ্গে কাজ করলে উভয় দেশের ব্যবসায় উন্নতি ঘটবে। ফলে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় আমরা আমাদের ব্যবসাকে আরও প্রসারিত করতে পারব।
আশার কথা হলো- ইতোমধ্যে বাংলাদেশ থেকে জুয়েলারি পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যে গত ২৯ জুলাই বাংলাদেশে ম্যানুফ্যাকচারিং কারখানা স্থাপন করেছে বিশ্বখ্যাত জুয়েলারি ব্র্যান্ড মালাবার। আরও অনেক বিদেশি প্রতিষ্ঠান অচিরেই বাংলাদেশের জুয়েলারি শিল্পে বিনিয়োগ করবে বলে আমি যথেষ্ট আশাবাদী।
দেশে বিপুলসংখ্যক আন্তর্জাতিক মানের দক্ষ স্বর্ণ কারিগর রয়েছেন। দেশজুড়ে প্রায় ৪০ হাজার জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার সঙ্গে প্রায় ৫০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান জড়িত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনা এবং সহযোগিতা পেলে আগামী পাঁচ বছরে বদলে যেতে পারে দেশের অর্থনীতি।
দেশের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা এবং উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। জুয়েলারি শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ অগ্রযাত্রাকে আরও এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র অপবাদ পাওয়া বাংলাদেশ আজ উন্নত দেশের কাতারে উঠছে।
দেশের জুয়েলারি শিল্পের অনেক শ্রমিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত। তাদের কাজের প্রশংসা করছে বিশ্ব। এ শ্রমিকরা জুয়েলারি শিল্পে তাদের শ্রম ও মেধা দিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। এ জন্য দেশে জুয়েলারি কারখানা করতে হবে। এখন দেশে যদি এ ধরনের কারখানা হয়, তাহলে বিদেশে কর্মরত স্বর্ণশিল্পীরা আবার দেশে ফিরবেন। দেশের কারখানায় কাজ করবেন। তাদের উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করবে বাংলাদেশ।
আমি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের জুয়েলারি ইন্ডাস্ট্রি সরেজমিন দেখেছি, অনেক দক্ষ কারিগরের সঙ্গে কথা বলেছি। বাংলাদেশে কাজের ভালো সুযোগ ও পরিবেশ না পেয়ে অন্য দেশে গিয়ে অনেকে সেখানে কাজ করে বিশ্বমানের অলংকার তৈরি করছেন। বিশেষ করে সনাতন ধর্মের অনেক কারিগর বাংলাদেশ থেকে গিয়ে কাজ করছেন ভারত ও দুবাইয়ে। যদি দেশে এই শিল্প তৈরি করা সম্ভব হয়, তাহলে দেশীয় কারিগরদের সুদিন ফিরবে। পাশাপাশি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কাজ করা স্বর্ণশিল্পীরা দেশে এসে কাজ করতে পারবেন। স্বর্ণশিল্পের দক্ষ কারিগররা এখন কাজ না পেয়ে অনেকেই পূর্বসূরিদের এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। অনেকেই পরিবার নিয়ে অমানবিক জীবনযাপন করছেন।
স্বাধীনতার ৫০ বছরেও সোনা চোরাচালান থামেনি। গণমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী- সরকার ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার আন্তরিক তৎপরতা সত্ত্বেও প্রতিদিন সোনা চোরাচালান হচ্ছে। বর্তমানে দেশে ৯০ ভাগ সোনা আসছে চোরাইপথে। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে সোনা চোরাচালান প্রতিরোধের সঙ্গে জড়িত সব আইন-প্রয়োগকারী সংস্থা, বিশেষ করে কাস্টমস, পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবসহ অন্যান্য সংস্থার সদস্যরা ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের এই কর্মকান্ড আরও জোরদারকরণের অনুরোধ করছি। আইন-প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সক্রিয় ভূমিকার মধ্যদিয়ে চোরাচালান বন্ধ হবে। দেশের টাকা পাচার বন্ধ হবে।
বাংলাদেশের জুয়েলারি শিল্পের বড় অপবাদ হলো পাইকারি পর্যায়ে সোনা কেনাবেচায় বৈধ কাগজপত্র বিনিময় হয় না। অর্থাৎ কেনাবেচার পুরো প্রক্রিয়াটি অবৈধ। এটা বিরাট সমস্যা। জুয়েলারি শিল্পের সমস্যা সমাধানে সারা দেশের মালিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। দেশের সব জুয়েলারি ব্যবসায়ী বাজুসের সদস্য হলে এ খাতে শৃঙ্খলা আসবে। বাজুসকে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি এবং সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী ও গতিশীল করার লক্ষ্য নিয়ে বর্তমান বাজুস নেতৃত্ব কাজ করছে।
দেশের একজন জুয়েলারি ব্যবসায়ীর সমস্যা মানে আমাদের সবার সমস্যা। জুয়েলারি খাতে ভ্যাটের সমস্যা সমাধান করতে হবে। হয়রানি বন্ধ করতে হবে। এ লক্ষ্যে জুয়েলারি খাতের সমস্যা সমাধানে বাজুসকে শক্তিশালী করতে হবে। সারা দেশের জুয়েলারি ব্যবসায়ীকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
লেখক : সায়েম সোবহান আনভীর, প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন-বাজুস এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বসুন্ধরা গ্রুপ।
SOURCE : বাংলাদেশ প্রতিদিনকুড়িগ্রামে চর আলোকিত করছে বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুল
Bashundhara Shuvosangho School Spreading Light of Education in Kurigram Shoal
বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সুদমুক্ত ঋণ পেলো ৩০৮ জন নারী
Bashundhara Foundation Provides Interest-Free Loans to 308 Women
বসুন্ধরা শুভসংঘের সদস্যদের মধ্যে গাছের চারা বিতরণ
Saplings Distribute Among Bashundhara Shuvosangho Members
পটুয়াখালীতে বসুন্ধরা শুভসংঘের বৃক্ষরোপণ
Bashundhara Shuvosangho Holds Tree-Plantation Campaign in Patuakhali
নাটোরের ৪০ জন অসচ্ছল নারী পেলো বসুন্ধরা শুভসংঘের কাছ থেকে সেলাই মেশিন
Bashundhara Shuvosangho Give Forty Sewing Machines to Insolvent Women in Natore