All news

সুদ ও সার্ভিস চার্জমুক্ত ঋণ পেলেন ৪৮১ জন

বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের ৭৩তম সুদ ও সার্ভিস চার্জ মুক্ত ঋণ বিতরণ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা মিলনায়তনে বসুন্ধরা গ্রুপের অর্থায়নে বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের সুদ ও সার্ভিস চার্জমুক্ত ৭৩তম ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন এই ঋণ বিতরণ করে। বাঞ্ছারামপুরে গতকাল মঙ্গলবার বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের ঋণ বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের উপদেষ্টা ও ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের প্রকাশক ময়নাল হোসেন চৌধুরী, বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম নাসিমুল হাই এফসিএস। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের ডিজিএম মাইমূন কবির, বসুন্ধরা শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, বাঞ্ছারামপুর উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি এম এ আওয়াল, বাঞ্ছারামপুর সরকারি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. চাঁন মিয়া সরকার, বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপক মো. মোশাররফ হোসেন, সিনিয়র অফিসার আমির হোসেন আনোয়ার, জুনিয়র অফিসার শাহজাহান, মোহাম্মদ বাছির প্রমুখ।

ঋণ বিতরণ অনুষ্ঠানে এম নাসিমুল হাই এফসিএস বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ২০০৫ সালে অসহায় অসচ্ছল মানুষদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য এই প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন। প্রকল্প শুরুর পর থেকে বসুন্ধরা গ্রুপ সাধারণ মানুষের কল্যাণে ধারাবাহিকভাবে এই সুদ ও সার্ভিস চার্জমুক্ত ঋণ বিতরণ করছে। নদী এলাকা বাঞ্ছারামপুরের মানুষ এই ঋণ গ্রহণ করে যেভাবে বিনিয়োগ করছেন, তাতে তাঁরা বেশিদিন আর অসচ্ছল থাকবেন না। তাঁদের সচ্ছল করে তোলাই বসুন্ধরা গ্রুপের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।’            
ঋণ বিতরণ অনুষ্ঠানে ময়নাল হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ সুদ ও সার্ভিস চার্জমুক্ত ঋণ বিতরণসহ গরিব অসহায় মানুষের মাঝে ওষুধসহ বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছে। গরিব ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে মাসিক উপবৃত্তি প্রদান করছে। অর্থের অভাবে যাতে কোনো শিক্ষার্থী ঝরে না পড়ে এবং উচ্চশিক্ষা গ্রহণ অব্যাহত রাখতে পারে সে ব্যবস্থা করছে। গরিব মেয়েদের মাঝে প্রশিক্ষণসহ সেলাই মেশিন বিতরণ করছে।
বসুন্ধরা গ্রুপ ব্যতিক্রমী এসব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যাতে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষদের সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। বসুন্ধরা গ্রুপ চায় গ্রামের অসহায় ও হতদরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক চিত্র পাল্টে দিতে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন সুদ ও সার্ভিস চার্জমুক্ত যে ঋণ প্রদান করছে তা কোনোভাবেই অবৈধ কাজে বিনিয়োগ করা যাবে না। বসুন্ধরা গ্রুপ দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে। দেশের অসহায় ও হতদরিদ্রদের মাঝে ক্রান্তিকালে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।
বসুন্ধরা গ্রুপ মহামারি, বন্যাসহ প্রাকৃতিক যেকোনো দুর্যোগে দেশের বিভিন্ন এলাকার হতদরিদ্র ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে আর্থিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়।’
গতকাল ৪৮১ জন উপকারভোগীর মাঝে ৭৮ লাখ পাঁচ হাজার টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে প্রথমবার ৫৬ জনকে ১৫ হাজার টাকা করে আট লাখ ৪০ হাজার টাকা, দ্বিতীয়বারে মতো ৩০৭ জনকে ১৫ হাজার টাকা করে ৪৬ লাখ পাঁচ হাজার এবং তৃতীয়বারের মতো ১১৮ জনকে ২০ হাজার টাকা করে ২৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হয়। এই ঋণ শুধু মহিলাদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে, যা দিয়ে তাঁরা হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল, শাক-সবজি চাষসহ ৩২ ধরনের কাজে বিনিয়োগ করে উপকার পাচ্ছেন। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের তত্ত্বাবধানে ২০০৫ সাল থেকে নিয়মিত এই ঋণ দেওয়া হচ্ছে। শুরুতে এই ঋণের পরিধি বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে তা পাশের উপজেলা হোমনা ও নবীনগরে প্রসারিত হয়েছে।

মিরপুর গ্রামের রোহেলা বেগম (৩০) বলেন, ‘আমার স্বামী নেই। বসুন্ধরার টেহা দিয়া হাঁস-মুরগি পাইলা অনেক লাভবান হইছি। এখন খাওয়াদাওয়ার কোনো সমস্যা নাই। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, বসুন্ধরার মালিকরা যেন ভালা থাকেন।’

খোষকান্দি গ্রামের জুলেখা খাতুন (৩৭) বলেন, ‘প্রথমে টেহা নিয়া সেলাই মেশিন কিনছি। মানুষের কাপড় সেলাই করছি, লগে কাপড়ও বিক্রি করছি। এরপর গরু কিনছি। এরপর সব টেহা মিলাইয়া বড় ছেলেডারে বিদেশ পাডাইছি। আল্লাহর রহমতে এখন ছেলেমেয়ে নিয়া অনেক ভালা আছি। বসুন্ধরা টেহা দেওনে এই সকল কাজের জোর পাইছি। আল্লাহর কাছে বসুন্ধরার হগলের লাগি অন্তর থেইক্যা দোয়া করি। আল্লাহ যেন তারার ব্যবসা ও সব মানুষরে ভালা রাহে।’

মানিকপুর গ্রামের নার্গিস আক্তার (২৮) বলেন, ‘ঋণ নিয়া সেলাই মেশিন কিন্যা এবং হাঁস-মুরগি লালন-পালন কইরা অনেক লাভবান হইছি। প্রথমে তো ঠিকমতো খাবার পাইতাম না। এখন আল্লাহর রহমতে খাবারের চিন্তা নাই। বসুন্ধরার সবাইরে আল্লাহ সুখে-শান্তিতে রাখুক।’

SOURCE : কালের কণ্ঠ