All news

পটুয়াখালীতে বসুন্ধরার কম্বল পেল আরো ১২০০ জন

পটুয়াখালীতে বসুন্ধরার কম্বল পেল আরো ১২০০ জন

সারা দেশে জেঁকে বসেছে শীত। কনকনে ঠাণ্ডায় কাহিল দরিদ্র অসহায় মানুষ। এই শীতে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী ও গলাচিপা উপজেলার দরিদ্র মানুষের রাতের ঘুম একটু আরামদায়ক করতে পাশে দাঁড়িয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করা বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ দুই উপজেলার এক হাজার ২০০ অসহায় মানুষের হাতে উপহার হিসেবে তুলে দিয়েছে কম্বল।

এ ছাড়া কম্বল উপহার দেওয়া হয়েছে নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার ৩০০ মাদরাসা শিক্ষার্থীর হাতে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :

পটুয়াখালীতে বসুন্ধরার কম্বল পেল আরো ১২০০ জনরাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) : পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ৭০০ শীতার্ত মানুষকে কম্বল দেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের চরইমারশন বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুলসংলগ্ন আগুনমুখা নদীর তীরে এবং উপজেলা পরিষদ মাঠে কম্বলগুলো বিতরণ করা হয়। বসুন্ধরা গ্রুপের আর্থিক সহায়তায় বসুন্ধরা শুভসংঘের আয়োজনে এই কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়।

দুটি স্থানে দেওয়া এই কম্বল পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হয়েছে অনেকেই। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী, শিশু ও বৃদ্ধ। কম্বল পেয়ে তারা জানায়, সরকারি সুযোগ-সুবিধা তাদের কাছে পৌঁছায় না। কিন্তু বসুন্ধরা গ্রুপ বাড়ি বাড়ি গিয়ে টোকেন দিয়েছে।

সেই টোকেন দিয়েই আজ কম্বল পেল তারা। এ জন্য বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এসব মানুষ।

কম্বল পেয়ে খুশি হয়েছেন ৭০ বছরের ফাতেমা বিবি। উপজেলার ছোটবাইশদিয়া গ্রাম থেকে আগুনমুখা নদীর তীরে তিনি এসেছেন কম্বল নিতে। হাতে কম্বলটি পেয়ে অনেকটাই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি।

ফাতেমা বিবি বলেন, ‘বাবারে আমাগো খবরতো কেউ লয় (নেয়) না। এই শীতে অনেক কষ্ট করছি। কেউ ফিররাও চায় নাই। কিন্তু বাড়িতে গিয়ে যহন এক পোলায় একটা কাগজ (টোকেন) দিয়া কইলো বসুন্ধরা গ্রুপ কম্বল দিবে। তহনও বিশ্বাস করতে পারি নাই। কিন্তু আইজ কম্বলখান হাতে পাইয়া অনেক খুশি হইছি। মনটা ভরে গেছে। বসুন্ধরা গ্রুপের জন্য মন ভইরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি।’

ফাতেমা বিবির সঙ্গে কম্বল হাতে নিয়ে বাড়ি ফিরছিল রুবিনা (৯)। একই ইউনিয়নের চরইমারশন গ্রামে তার বাড়ি। ওই গ্রামে বসুন্ধরা শুভসংঘ স্কুলের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে সে। বাবা দিনমজুর। চার বোনের মধ্যে রুবিনা সেজো। অভাব-অনটনের সংসারে একটি কম্বল তাদের উষ্ণতার ছোঁয়া দেবে বলে বিশ্বাস তার। তাই আনন্দ নিয়ে বাড়ি ফিরছিল সে। রুবিনা বলে, ‘আমাদের চরে স্কুল আছিল না। শুভসংঘ স্কুল দেছে। লেখাপড়ার জন্য খাতা-কলম সবই পাই। আজ পরিবারের লাইগা একটা কম্বলও পাইলাম। আমাদের খুব খুশি লাগছে।’

কম্বল নিতে আসা ইয়ানুর বেগম আক্ষেপ করে বলেন, ‘দুইডা পোলামাইয়া লইয়া খুব কষ্ট করছি। মেম্বার-চেয়ারম্যানরা কোনো দিন আইয়া কয় নাই ওরে একটা কম্বল দেই। আইজ আরামে বাচ্চাগো লইয়া ঘুমামু। এই কম্বল যে আমাদের লইগা পাঠাইছে আল্লাহ তারে অনেক ভালো রাখুক। এই দোয়া করি।’

কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন কালের কণ্ঠের জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক ও শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, রাঙ্গাবালী প্রেস ক্লাবের সভাপতি কামরুল হাসান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কালের কণ্ঠের রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রতিনিধি ও বসুন্ধরা শুভ সংঘের উপজেলা শাখার সমন্বয়ক এম সোহেল।

গলাচিপা (পটুয়াখালী) : ‘গত তিন বছর ধইরা শীতে কষ্ট করছি। আইজ আর কষ্ট করতে হইবে না। আমাগো মতো মাইনষ্যের কেউ খোঁজখবর লয় না। কত শীত গেছে, কতজনের দুয়ারে গেছি একটা শীতের জামাও কেউ দেয় নায়। আমাগো লইগ্যা ভাবার মানুষ আছে? আমরা গরিব মানুষ! আমাগো ভাগ্য ভালো বসুন্ধরা গ্রুপ দিয়া আমারে একটা কোম্বল দিছে। হেইয়া না হইলে এবারও শ্যাষ বয়সে শীতে কষ্ট করতে অইতো। যারা আমারে এই কোম্বল দিছে বাজান আমি খাস দিলে হেগো লইগ্যা দোয়া করি। আল্লাহ হেগোরে সুস্থ রাহুক। গরিব মাইনষ্যের লইগ্যা আরো বেশি যেন করতে পারে।’ কথাগুলো বলছিলেন গলাচিপা পৌর এলাকার বনানী সড়কের দিনমজুর সামসুল হক মল্লিক (৭৫)।

গলাচিপা পৌর এলাকার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের রতনদী এলাকার ছফুরা বেগম (৬৭) বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধইরা ক্যান্সারে ঘরের সব জিনিসপত্র বেইচ্চা দিছি। এহন কোনোরহম বাইচ্চা আছি। অসুস্থ মানুষ শীতে অনেক কষ্ট করছি। কিন্তু কেউই আমারে একটা শীতের কোম্বল দেয় নাই। আজই আমারে বসুন্ধরা দিয়া একটা কোম্বল দিছে। শীতে আর কষ্ট করতে হইবে না। যারা আমারে কোম্বল দিছে আল্লায় হেগো ভালো রাহুক।’

উপজেলার ছয়আনী গ্রামের আমেনা বেগম (৫২) বলেন, ‘আমরা এই শীতে অনেক কষ্ট করছি। গতকাইল রাইতে খবর পাইছি আমাগো মতো গরিব মাইনষেরে কোম্বল দিবে। এবার শীত শুরু হইতেই অনেক কষ্ট করছি। এহন রাইতে এই কোম্বলে গাও হরম হইবে। আল্লায় হেগো ভালো করুক।’

গলাচিপা পৌরসভায় গলাচিপা পৌর এলাকায় ৫০০ অসহায় শীতার্ত মানুষকে বসুন্ধরা শুভসংঘের উদ্যোগে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। গলাচিপা তুরস্ক ফ্রেন্ডশিপ স্কুল মাঠে বিকেল ৪টায় প্রধান অতিথি হিসেবে এসব উপহার অসহায়দের হাতে তুলে দেন পটুয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদা।

সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদা বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপের এই উদ্যোগ সময়পোযোগী। আমার নির্বাচনী এলাকার অনেক স্থানে বসুন্ধরা শুভসংঘ এ বছর শীতে কম্বল বিতরণ করবে, যা এখন চলমান। আমি বসুন্ধরা গ্রুপের হয়ে এলাকার এই উপহার অসহায় শীতার্তদের হাতে তুলে দিতে পেরে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তারা সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে যে কাজ করছে এ জন্য তার ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। আমি আমার এলাকাবাসীর হয়ে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা শুভসংঘের পরিচালক ও কালের কণ্ঠের জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক জাকারিয়া জামান, গলাচিপা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ সাহিন, গলাচিপা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও বসুন্ধরা শুভসংঘ গলাচিপা উপজেলা শাখার উপদেষ্টা মো. ফোরকান কবির, বসুন্ধরা শুভসংঘ গলাচিপা শাখার উপদেষ্টা ফারজানা রশিদ শাম্মি, বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাপস দত্ত, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গলাচিপা জোনাল অফিসের ডিজিএম মো. মাইনুদ্দিন আহম্মেদ প্রমুখ।

নিয়ামতপুর (নওগাঁ) : বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলায় নুরানি ও কওমি মাদরাসার অসহায়-দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে উপজেলার তিনমাথার মোড়ে নুরানি মাদরাসা এবং নিয়ামতপুর দারুল উলুম কওমি মাদরাসার ৩০০ শিক্ষার্থীর হাতে কম্বল তুলে দেওয়া হয়। বসুন্ধরার নতুন কম্বল উপহার পেয়ে শিক্ষার্থীরা খুব খুশি।

কম্বল বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন কালের কণ্ঠের নিয়ামতপুর উপজেলা প্রতিনিধি ও নিয়ামতপুর উপজেলা প্রেস ক্লবের সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন, বসুন্ধরা নিয়ামতপুর উপজেলা কার্যালয়ের সাইড ম্যানেজার মো. জাকির হোসেন, ল্যান্ড অফিসার ফজলুর রহমান, কো-অর্ডিনেটর মো. রাসেল, সাইট সুপারভাইজার মো. রুবেল, মো. ছগির হোসেন, বসুন্ধরা শুভসংঘ নিয়ামতপুর উপজেলা শাখার সভাপতি মো. জামাল হোসেনসহ শুভসংঘের সদস্যরা।

মাদরাসার শিক্ষক ও ইমামরা হাত তুলে দোয়া করে বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপ দরিদ্র ও অসহায় মানুষের দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়েছে। কনকনে শীতে দরিদ্র মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা এ ধরনের ভালো কাজ করে থাকে। অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করে।

SOURCE : কালের কণ্ঠ