All news

পটুয়াখালীর ৫০০ শীতার্ত পেল বসুন্ধরা শুভসংঘের কম্বল

পটুয়াখালীর ৫০০ শীতার্ত পেল বসুন্ধরা শুভসংঘের কম্বল

‘আমার বয়স বাবা আটাত্তুর বছর। প্রেত্যেক বচ্ছর (প্রতিবছর) শীতে চিরা খেতা (কাঁথা) গায় দেই, কিন্তু শীত মানে না। মাঘের শীত, বাঘের গায়ও লাগে। আর আমি তো বুড়া মানুষ।

আমারে তো কাঁপাইয়া দেয় শীতে। রাইতে শীতে বড় কষ্ট করি। ঘরে একটা বিলই (বিড়াল) আছে, ওইডারে লগে (সাথে) লইয়া ঘুমাই শরীলডা গরম রাহার লইগ্যা। আইজ অইতে মোনে অয় শীতের কষ্টডা আমার গ্যাছে।
এই জীবনে একটা ল্যাপ কোম্বল আমারে কেউ দেয় নাই। সব সময় মনে অইতো আমি মানুষই না। এই লইগ্যা কেউ আমারে একটা শীতের কোম্বল দেয় নাই। এ্যাহন মোনে অইছে আমি মানুষ, আমার মতো মানুষের খোঁজ লওয়ার লইগ্যা ভালো মানুষও আছে।
যেরা আমারে খুশি করছে আল্লায় হেগোরে সব সময় খুশি রাহুক।’
কথাগুলো বলতে বলতে চোখের কোণ বেয়ে পানি ঝরছিল প্রতিবন্ধী আব্দুর রহিমের। তবে সে অশ্রু ছিল আনন্দের। পটুয়াখালী লঞ্চঘাট এলাকার বাসিন্দা তিনি। বসুন্ধরা শুভসংঘের একটি কম্বল উপহার পেয়ে এ অভিমত প্রকাশ করেন তিনি।

 ১০৪ বছর বয়সের কালিপদ সাহা বলেন, ‘বাবা একটা কম্বলে আমার অনেক উপকার হয়েছে। এবার শীতে বড় কষ্টে আছিলাম। যেরা কম্বল দেছে, গরিবের পাশে এভাবেই তারা সব সময় থাকুক।’

আজ সোমবার বসুন্ধরা শুভসংঘের কম্বল উপহার পেয়ে এভাবেই নানা অভিমত ব্যক্ত করেন দুস্থ শীতার্ত মানুষরা।

সোমবার দুস্থ ও গরিব মানুষের মধ্যে পটুয়াখালী সদর উপজেলার হাজী আক্কেল আলী হাওলাদার কলেজ মাঠে বেলা ১১টায় ৫০০ শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করে বসুন্ধরা শুভসংঘ।

এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. সাইদুল ইসলাম। এ ছাড়াও পটুয়াখালী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও শুভসংঘ পটুয়াখালী শাখার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মো. হাফিজুর রহমান, শুভসংঘের উপদেষ্টা পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজের প্রফেসর ডা. ওহিদুজ্জামান শামীম উপস্থিত ছিলেন। 

শুভসংঘ পটুয়াখালী শাখার সভাপতি রাশেদুল রাশেদ, সহসভাপতি কাজী দেলোয়ার হোসেন দিলীপ ও কামরুন্নাহার জেসমিন, সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লিটন চন্দ্র দাস ও রুদ্র মুহম্মদ জাহিদুল, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলাম ও সংগঠনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। 

এ ছাড়াও পটুয়াখালী সরকারি মহিলা কলেজ শাখার বসুন্ধরা শুভসংঘের সভাপতি আফরোজা মনি এবং সাধারণ সম্পাদক ইসরাত জাহান এপি উপস্থিত ছিলেন। 

পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘বসুন্ধরা শুভসংঘ একটি মানবিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইতিমধ্যে সারা দেশে তাদের পরিচিতি গড়েছে। পিছিয়ে পড়া মানুষের পাশে যেভাবে বসুন্ধরা শুভসংঘ দাঁড়িয়েছে তাতে সমাজ পরির্বতনে এ সংগঠনটি একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে অচিরেই। শুধু পটুয়াখালী নয়, দেশব্যাপী এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়ে বসুন্ধরা শুভসংঘ এগিয়ে যাচ্ছে। আমি এ সংগঠনটিসহ বসুন্ধরা গ্রুপের সাফল্য কামনা করছি।’

জেলা পরিষদের সভাপতি ও বসুন্ধরা শুভসংঘের উপদেষ্টা মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি অসহায় মানুষের জন্য নিবেদিত হয়ে কাজ করছে। এ সংগঠনের উপদেষ্টা হিসেবে আমি গর্বিত।’ 

শুভসংঘের উপদেষ্টা পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজের প্রফেসর ডা. ওহিদুজ্জামান শামীম বলেন, ‘ইতিমধ্যে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বসুন্ধরা শুভসংঘ শিক্ষাবৃত্তি, দুস্থ নারীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সেলাই মেশিন বিতরণ, স্কুল প্রতিষ্ঠা করা, বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম, শিক্ষা উপকরণ বিতরণসহ নানামুখী কার্যক্রমে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। বসুন্ধরা শুভসংঘের এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’

SOURCE : কালের কণ্ঠ