বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) সভাপতি ও দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর বলেছেন, স্বর্ণ চোরাচালান রুখতে দেশে জুয়েলারি ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলার বিকল্প নেই। এ খাতে ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠলে প্রতি বছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের জুয়েলারি পণ্য রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
শনিবার (৩০ জানুয়ারি) এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।
বাজুস সভাপতি বলেন, দেশে বিপুলসংখ্যক আন্তর্জাতিক মানের দক্ষ স্বর্ণ কারিগর রয়েছেন। দেশজুড়ে ২৫ হাজার স্বর্ণের দোকান এবং ৪৪ লাখ মানুষ এ খাতে যুক্ত রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঠিক দিকনির্দেশনা ও ব্যাংকিং খাতের সহযোগিতা পেলে আগামী পাঁচ বছরে অন্তত ২ কোটি মানুষ এ খাতের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারবেন। এর মধ্য দিয়েই বদলে যেতে পারে দেশের অর্থনীতি।
সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, দেশের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা এবং উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। জুয়েলারি ইন্ডাস্ট্রি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ অগ্রযাত্রাকে আরও ত্বরান্বিত করা সম্ভব বলে মনে করেন বাজুস সভাপতি।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র অপবাদ পাওয়া বাংলাদেশ আজ উন্নত দেশের কাতারে উঠে যাচ্ছে। অবহেলিত এ স্বর্ণশিল্পের গতি ফেরাতে আমাদের আইকনিক প্রধানমন্ত্রীর সঠিক দিকনির্দেশনা এবং ব্যাংকিং খাতের সহযোগিতা খুবই জরুরি।
স্বর্ণ পরিশোধন পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে বাজুস সভাপতি বলেন, শুধু আমদানি নয়, এখন সময় হয়েছে স্বর্ণ রপ্তানির। এজন্য দেশে জুয়েলারি কারখানা করতে হবে। আমাদের অনেক শ্রমিক রয়েছেন যারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জুয়েলারি শ্রমিক হিসেবে চমৎকার কাজ করে যাচ্ছেন। এখন দেশে যদি এ ধরনের কারখানা হয় তাহলে তারা দেশের কারখানায় কাজ করবেন এবং উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হবে। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও স্বর্ণ চোরাচালান থামানো যায়নি। তথ্য বলছে, সরকার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার আন্তরিক তৎপরতা সত্ত্বেও প্রতিদিন স্বর্ণ চোরাচালান হচ্ছে। এ-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, বর্তমানে দেশে ৯০ ভাগ স্বর্ণ আসছে চোরাই পথে। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কিন্তু দেশে স্বর্ণ পরিশোধন কারখানা গড়ে উঠলে এ শিল্প থেকে সরকার বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবে। একই সঙ্গে কারিগর থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পর্যন্ত প্রতিটি স্তরের মানুষ এর সুফল পাবেন।
বাজুস সভাপতি বলেন, সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে এ খাতের ব্যবসায়ীরা কিছুটা নিরুৎসাহ হচ্ছেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সঠিক পথে ব্যবসা করতে চাওয়া স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা কোণঠাসা অবস্থায় আছেন। শুধু তাই নয়, চোরাচালান থামানো, সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি রোধ করা এবং দেশের প্রায় ২ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য দেশেই জুয়েলারি ইন্ডাস্ট্রি তৈরি করতে হবে। এটা তৈরি হলে স্বর্ণ চোরাকারবার বন্ধ হবে, দেশের টাকা পাচার বন্ধ হবে। বিপুলসংখ্যক কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের জুয়েলারি বিদেশে রপ্তানি হবে।
তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতের সহায়তা ছাড়া এ ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলা খুবই কঠিন কাজ। স্বর্ণশিল্প বিকাশে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক সহযোগিতা খুবই দরকার। এটি বাস্তবায়ন হলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পাবে, যা দিয়ে ২০৪১ সালের উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা সম্ভব। কাঁচামাল পরিশোধন করে স্বর্ণ উৎপাদনের যুগে প্রবেশ করা বাংলাদেশের জন্য সত্যিই যুগান্তকারী অর্জন। ওই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ শতভাগ রপ্তানিমুখী স্বর্ণ ও গহনা শিল্পের স্বনির্ভরতা দেখাতে পারবে কি না জানতে চাইলে সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, আমাদের পাশের দেশ ভারত প্রতি বছর প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের জুয়েলারি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে। এটি সে দেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখে। বাংলাদেশেও তা সম্ভব। কারণ বাংলাদেশে যে ধরনের দক্ষ কারিগর আছেন, তা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিরল।
বাজুস সভাপতি এ সময় বলেন, আমি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের জুয়েলারি ইন্ডাস্ট্রিতে সরেজমিন গিয়েছি, অনেক দক্ষ কারিগরের সঙ্গে কথা বলেছি। বাংলাদেশে কাজের ভালো সুযোগ ও পরিবেশ না পেয়ে অন্য দেশে গিয়ে অনেকে সেখানে কাজ করে বিশ্বমানের অলঙ্কার তৈরি করছেন। বিশেষ করে সনাতন ধর্মের অনেক কারিগর বাংলাদেশ থেকে গিয়ে কাজ করছেন ভারত ও দুবাইয়ে। যদি দেশে এ শিল্প তৈরি করা সম্ভব হয় তাহলে দেশি কারিগরদের সুদিন ফিরবে। পাশাপাশি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কাজ করা স্বর্ণশিল্পীরা দেশে এসে কাজ করতে পারবেন। স্বর্ণশিল্পের দক্ষ কারিগররা এখন কাজ না পেয়ে অনেকেই পূর্বসূরিদের এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। অনেকেই পরিবার নিয়ে অমানবিক জীবন যাপন করছেন।
বাংলাদেশের স্বর্ণশিল্পের বড় অপবাদ হলো পাইকারি পর্যায়ে স্বর্ণ কেনাবেচায় বৈধ কাগজপত্র বিনিময় হয় না। অর্থাৎ কেনাবেচার পুরো প্রক্রিয়াটি অবৈধ। স্বর্ণ পরিশোধন ও উৎপাদনে যাওয়ার মাধ্যমে কি এ শিল্পের অপবাদ ঘুচবে- এমন প্রশ্নের জবাবে সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, অবশ্যই আমরা এ ধরনের অপবাদ থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। সে কারণেই দেশে জুয়েলারি ইন্ডাস্ট্রির কোনো বিকল্প নেই। প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা পেলে আমরা জুয়েলারি শিল্পে বিপ্লব ঘটাতে পারব। তখন চোরা পথে দেশে স্বর্ণ আনা বন্ধ হবে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের স্বর্ণ রপ্তানি করতে পারব।
স্বর্ণের মূল্য নির্ধারণ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সভাপতি সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি এবং বাংলাদেশ ব্যাংক মিলে স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা উচিত। কারণ বাজুস হলো এ শিল্পের মূল অংশীজন আর বাংলাদেশ ব্যাংক হলো নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা। তাহলে গ্রাহক এবং ব্যবসায়ী দুই পক্ষই লাভবান হবেন।
কবে নাগাদ স্বর্ণ পরিশোধন কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব- জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাঁচামাল হলেই জুয়েলারি ইন্ডাস্ট্রি তৈরি করা সম্ভব। ২০৪১ সালের উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ তৈরিতে এ শিল্প ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে রপ্তানি খাতের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জুয়েলারি শিল্প ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
গোল্ড ব্যাংক প্রসঙ্গেও কথা বলেন বাজুস সভাপতি সায়েম সোবহান আনভীর। তিনি বলেন, ১৯৮০ সাল পর্যন্ত দেশে স্বর্ণ বন্ধক রেখে ব্যাংক ঋণ নেওয়া যেত। কিন্তু এখন সেই নিয়মটি আর নেই। এটা চালু করা জরুরি। এ ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে একটি নীতিমালা দরকার, যার আওতায় বাজুসের মাধ্যমে দেশে গোল্ড ব্যাংক এবং গোল্ড এক্সচেঞ্জ করা সম্ভব। গোল্ড এক্সচেঞ্জে প্রতিদিনের মূল্য নির্ধারণ হবে। এটা হলে স্বর্ণ চোরাচালান, পাচারের যেসব কথা শোনা যায় তা বন্ধ হয়ে যাবে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহায়তা প্রয়োজন। সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া এ খাতের উন্নয়ন সম্ভব নয়। এতে ব্যাংকিং খাতের সহযোগিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চোরাচালান বন্ধ করে দেশে জুয়েলারি ইন্ডাস্ট্রি তৈরিতে ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।
SOURCE : Banglanews24Hospital for Covid-19 Patients at Bashundhara’s ICCB to Open Soon
মীরসরাই এবং কেরানীগঞ্জে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করলো বসুন্ধরা গ্রুপ
বসুন্ধরা গ্রুপ কাপ গলফ টুর্নামেন্ট ২০১৩ গলফারদের উৎসব
Dazzling Finish of Bashundhara Cup Golf Tournament 2013
Bashundhara Group Exporting Tissue to 16 Countries
Bashundhara Group Chairman Stands by Ailing Girl
Bashundhara Group Chairman Ahmed Akbar Sobhan Stands by Sick Tasmia
India Willing Partner in Bangladesh Development
Bashundhara Group Chairman Stands by Ailing Boy Siraj
Ceremony of Bashundhara Cup Golf