২০০ কোটি টাকা তুলবে বসুন্ধরা পেপার মিলস

পুঁজিবাজার থেকে ২০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে বসুন্ধরা গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেড। প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে বাজারে শেয়ার ছেড়ে এই টাকা সংগ্রহ করবে কোম্পানিটি। বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আইপিও নিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর খিলক্ষেতে বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে কোম্পানিটির এই রোডশো অনুষ্ঠিত হয়। এতে সম্ভাব্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে কোম্পানির পরিচিতি, আর্থিক অবস্থার বিবরণ, আইপিও ইস্যুর কারণ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। পুঁজিবাজার থেকে সংগ্রহ করা অর্থের একটি বড় অংশ দিয়ে কারখানার আধুনিকায়ন ও মেশিনারি আমদানি করবে কোম্পানিটি। যাতে ব্যয় করা হবে ১২০ কোটি টাকা। কোম্পানির তথ্যকণিকা থেকে জানা যায়, আইপিওতে উত্তোলিত অর্থ থেকে ৬০ কোটি টাকা ব্যয় হবে ঋণ পরিশোধে। কারখানার অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যয় হবে ৬ কোটি টাকা। ইনস্টলেশন কস্টে ব্যয় হবে ৩ কোটি টাকা। যন্ত্রাংশে খরচ হবে ৩ কোটি টাকা। ভূমি ও ভূমি উন্নয়নে খরচ হবে ৩ কোটি টাকা, আইপিওতে খরচ হবে ৫ কোটি টাকা। কোম্পানির প্রতিটি শেয়ারের অভিহিত মূল্য হবে ১০ টাকা।
আর পরিশোধিত মূলধন ১৪৭ কোটি টাকা। কোম্পানিটি (জানুয়ারি, ’১৬-মার্চ, ’১৬) সময়ে শেয়ারপ্রতি আয় করেছে ৮৬ পয়সা। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৩ টাকা ৬৩ পয়সা। তবে আগের বছর এই ইপিএস ছিল ৪ টাকা ৪০ পয়সা। ২০১৫ সালে কর পরবর্তী মুনাফা ছিল ২৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। যা এর আগের বছরে ছিল ২১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য (এনএভি) ছিল ৩০ টাকা ৬ পয়সা। আর (জানুয়ারি, ’১৬-মার্চ, ’১৬) সময়ে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য হয়েছে ৩০ টাকা ৯২ পয়সা।
বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেড মূলত বিভিন্ন ধরনের পেপার উৎপাদন করে। এর মধ্যে রয়েছে এমজি পেপার, ওফসেট পেপার, হোয়াইট রাইটিং এন্ড প্রিন্টিং পেপার, ব্রাউন র্যাপার, ব্রাউন লাইনার, নিউজপ্রিন্ট পেপার, কোটেড এন্ড আনকোটেড পেপার বোর্ড, এফোর পেপার, গøাসাইন পেপার, স্টাইফেনার, লেজার পেপার, পিপি ওভেন ব্যাগ, স্যাক পেপার। আবার টিস্যুর মধ্যে রয়েছে ফেইসাল টিস্যু, পকেট টিস্যু, ওয়েট টিস্যু, গ্রিন টিস্যু, স্যানিটারি ন্যাপকিন, বেবি ডায়াপার, টয়লেট টিস্যু, কিচেন টাওয়েল। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণে আইপিওতে শেয়ারের বিক্রয়মূল্য নির্ধারিত হবে। আর এর ওপর নির্ভর করবে আইপিওতে কোম্পানি কতগুলো শেয়ার ইস্যু করবে।
নিয়ম অনুসারে, কোম্পানির কাছে কোনো কিছু জানার থাকলে আগামী ৩ দিনের মধ্যে আবেদন করতে হবে। এর ভিত্তিতে কোম্পানি তার প্রসপেক্টাসে সংশোধনের কিছু থাকলে তা বিবেচনা করবে। পরবর্তী সময়ে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে কোম্পানির ‘নির্দেশক মূল্য (ওহফরপধঃরাব চৎরপব)’ উল্লেখ করা হবে। এর ভিত্তিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে নিলামের মাধ্যমে শেয়ার বিক্রি করা হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সংরক্ষিত শেয়ার বিক্রি যে দামে শেষ হবে, সে দামে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রির প্রস্তাব করা হবে।
রোডশোতে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাফওয়ান সোবহান বক্তব্য রাখেন। তিনি কোম্পানির ব্যবসা সম্পর্কে উপস্থিত অতিথিদের অভিহিত করেন। কোম্পানির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা মো. তোফায়েল আহমেদ আগত অতিথিদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। এ সময় তিনি বলেন, বসুন্ধরা পেপার মিলস পুঁজিবাজার থেকে যে টাকা তুলছে তার বড় অংশ খরচ হবে কোম্পানির ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য। বিশেষ করে নতুন মেশিনারিজ আমদানি ও আধুনিকায়নে। বিগত বছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় কমার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এটার অন্যতম কারণ ছিল রাজনৈতিক অস্থিরতা, যাতে আমাদের প্রোডাক্ট সরবরাহ কম হয়েছে। আর এক ইউনিটে আগুন লাগার কারণে প্রায় ৩ হাজার টন পেপার আমরা উৎপাদন করতে পারেনি। এর সঙ্গে আমরা দুই ধাপে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধি করেছি। তাতে শেয়ারপ্রতি আয় ডাইলোটেড হয়েছে। তবে চিন্তার কিছু নেই। আইপিওর মাধ্যমে উত্তেলিত অর্থ কাজে লাগানো সম্ভব হলে কোম্পানির আয় বেড়ে যাবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে টিস্যুর চাহিদা রয়েছে ২ হাজার টন। যার মধ্যে ১ হাজার ৭০০ টন উৎপাদন করে বসুন্ধরা পেপার মিলস। যা মার্কেটের ৮৫ শতাংশ। এখন দেশে প্রায় ৩ শতাংশেরও কম মানুষ টিস্যু ব্যবহার করে। এটা দিন দিন বাড়ছে। বাজারের এই চাহিদাকে কাজে লাগাতে পারলে কোম্পানির প্রবৃদ্ধি বেড়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি। এ সময় বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি ছায়েদুর রহমান, ট্রিপল এ ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট মোহাম্মদ এ হাফিজ, কোম্পানি সচিব নাসিমুল হাই, কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেড আইপিওতে আনতে ইস্যু ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছে ট্রিপল এ ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। আর রেজিস্টার টু দ্য ইস্যু হিসেবে রয়েছে এফসি ক্যাপিটাল লিমিটেড।