হিউজকে জয় উৎসর্গ

ড্রেসিংরুমের কাচের দেয়ালে হেলান দিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা কয়েকটা ব্যাট। হাতলের ডগায় ঝুলছে বাঘের মুখ আঁকা বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের টুপি। এভাবেই ফিল হিউজের বিদেহী আত্মার প্রতি সম্মান জানিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চতুর্থ ওয়ানডেতে জয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে আসা মাহমুদ উল্লাহ আরো জানিয়েছেন, এ জয়টা বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা উৎসর্গ করেছেন ফিল হিউজকে।
ম্যাচসেরার পুরস্কার পাওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে শেষ করে এসেছিলেন, ব্যাপারটা ভুলে যাওয়ার কথা নয় মাহমুদ উল্লাহর। বছর দুয়েক আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ও সিরিজ নির্ধারণী ওয়ানডেতে ২ উইকেট নিয়ে এবং ৪৮ রান করে মাহমুদ উল্লাহ বাংলাদেশ দলকে এনে দিয়েছিলেন ঐতিহাসিক জয়। তারপর, কালের পরিক্রমায় সেই স্মৃতিতে জমেছে ধুলা। বছর দুয়েক পর আরো একবার যখন ম্যচসেরার পুরস্কার মাহমুদ উল্লাহর হাতে, তার আগে কিন্তু কঠিন সময়ই অতিক্রম করছিল বাংলাদেশ দল। টানা দুই ম্যাচ ভালো করা বাংলাদেশ দলের টপঅর্ডার তৃতীয় ম্যাচেও ঝলসে উঠবে, ‘ল অব অ্যাভারেজ’ তো সেটা বলে না! ৩২ রানেই ৪ উইকেট নেই, এমন জায়গা থেকে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে ১৩৪ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশ দলকে ম্যাচে ফেরানো। এরপর দ্রুত উইকেট পতনে আবারও যখন দলের বিপদ, তখন মাশরাফি বিন মর্তুজাকে সঙ্গে নিয়ে ৬৫ রানের জুটি গড়ে শেষ পর্যন্ত মাঠে থেকে সংগ্রহটা স্বস্তিদায়ক জায়গায় নিয়ে গেছেন তিনি।
‘নায়ক’ হতে অনাপত্তির কথা স্বলজ্জ হাসিতে মেনে নিলেও চতুর্থ ওয়ানডেতে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক তো মাহমুদ উল্লাহই। প্রায় দেড় বছর পর হাফসেঞ্চুরির দেখা পাওয়া মাহমুদ উল্লাহ ওয়ানডেতে নিজের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান করার পাশাপাশি খানিকটা আক্ষেপ করেছেন সেঞ্চুরি করতে না পারারও। ‘সেঞ্চুরির ইচ্ছা তো ছিলই, আমি আর মুশফিক যখন ব্যাট করছিলাম, তখন মুশফিক আক্রমণাত্মক খেলছিল আর আমি অ্যাঙ্কর রোল প্লে করছিলাম। এরপর সাব্বির, রাজু (আবুল হাসান), দ্রুত আউট হয়ে যাওয়ায় আমি ঠিক করি শেষ পর্যন্ত থাকব। শেষের দুই-তিন ওভারের আগে আক্রমণাত্মক শট খেলব না’, এভাবেই দলীয় প্রয়োজনেই নিজের সেঞ্চুরির ইচ্ছা বিসর্জনের কথা খোলাখুলিই জানিয়েছেন মাহমুদ উল্লাহ। কারণ দলের স্বার্থ এবং জয়ই যে তার কাছে সবকিছুর ঊর্ধ্বে! বোলিংটাও করেন বলে অলরাউন্ডার তকমাটা গায়ে লেগে আছে ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই, তার আড়ালেই যেন ঢাকা পড়ে গেছে তাঁর নান্দনিক ব্যাটিংয়ের প্রতিভাটাও। বেশির ভাগ সময়ই তাঁকে ব্যাট করতে হয়েছে ৬ কি ৭ নম্বরে, সঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন টেলএন্ডারদের। পছন্দের ৪ নম্বরে নেমে রান করে টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে দাবি জানিয়ে রাখলেন এ পজিশনেই আরো সুযোগের, ‘আমি যেভাবে খেলি, তাতে প্রথমে উইকেটে একটু সময় কাটিয়ে সেট হতে হয়। ৪ নম্বরেই ব্যাট করে স্বাচ্ছন্দ্য পাচ্ছি, এখানেই যেন সামনে আরো ভালো করতে পারি, সে জন্য অনেক কষ্ট করতে হবে।’
বাংলাদেশ দলের ‘সুপারম্যান’ সাকিব আল হাসান প্রথম ওয়ানডেতে ব্যাটে-বলে অনবদ্য নৈপুণ্যে জিতিয়েছিলেন দলকে। পরের দুটো ম্যাচে টপ অর্ডার এনে দিয়েছিল দারুণ শুরু। কাল টপ অর্ডার এবং সাকিব-সবাই যখন ব্যর্থ, তখন দায়িত্বটা নিতে হয় মিডল-অর্ডারকেই। সেই দায়িত্বের ডাকে ভালোভাবেই সাড়া দিয়েছেন আত্মীয়তার বন্ধনেও আবদ্ধ দুই মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান, মাহমুদ উল্লাহ ও মুশফিক। এ পালাবদলটা বাংলাদেশ দলের পরিণত হওয়ার সূচক হিসেবেই দেখছেন মাহমুদ উল্লাহ, ‘শুরুতে উইকেট পড়ে যাওয়ার পর আমাদের যে জুটিটা হয়েছিল, সেটা ভালো ছিল। বড় বড় দলের বিপক্ষে এ অভিজ্ঞতাটা কাজে লাগাতে হবে।’ সবশেষে মাহমুদউল্লাহ বাংলাদেশ দলের পক্ষ থেকে এই জয় উৎসর্গ করেছেন সদ্যপ্রয়াত ফিল হিউজকে ‘বাংলাদেশ দলের পক্ষ থেকে আমরা ফিল হিউজের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি এবং এ জয় তাঁকেই উৎসর্গ করছি।’