হস্তান্তরের জন্য প্রস্তুত বসুন্ধরা হাসপাতাল

করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) স্থাপিত দেশের বৃহত্তম হাসপাতালটির সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চাইলে যেকোনো সময় সেটি হস্তান্তর করার প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল রবিবার আইসিসিবিতে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান প্রতিষ্ঠানটির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা এম এম জসীম উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সব কাজ শেষ, আপনারা জানেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ৪ মে হাসপাতালটি চালু হওয়ার বিষয়ে একটি আনঅফিশিয়াল তারিখ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আগামীকাল (আজ সোমবার) তারা এটি শুরু করতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না। তবু আমরা শুনেছি তারা জরুরি ভিত্তিতে এখানে লোকবল পোস্টিং দেওয়ার চেষ্টা করছে।’ কবে নাগাদ হস্তান্তর হতে পারে—এমন প্রশ্নের জবাবে জসীম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা হস্তান্তরের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। আমাদের পেপার ওয়ার্কসও সম্পন্ন হয়েছে। তারা বুঝে নিতে চাইলেই আমরা বুঝিয়ে দিতে পারব। হাসপাতালের জন্য নিয়োগ করা তাদের একজন পরিচালক গতকাল শনিবার এখানে কিছু সময় অফিস করেছেন। এর পর থেকে তাঁর সঙ্গে আর যোগাযোগ হচ্ছে না।’
এদিকে হাসপাতাল হস্তান্তরের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত জানিয়ে স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (ঢাকা সিটি বিভাগ) মাসুদুল আলম বলেন, ‘মাত্র ২০ দিনের মধ্যে এত বড় একটি হাসপাতাল নির্মাণ করা সত্যিই দারুণ একটি ব্যাপার। শুধু আমাদের দেশ না, দক্ষিণ এশিয়ার মাঝেও এটা বড় একটা ঘটনা। এটা আমাদের সক্ষমতাকে তুলে ধরে। হাসপাতালটি বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আমরা এক প্রকার বুঝেই নিয়েছি। এখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চাইলেই তাদের বুঝিয়ে দেব।’
এদিকে গতকাল রবিবার কয়েকজন চিকিৎসক ও কর্মকর্তাকে হাসপাতালে যোগ দিতে আসতে দেখা গেছে। তবে তাঁদের গ্রহণ করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল কাউকে দেখা যায়নি। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে একজন চিকিৎসক বলেন, ‘মাত্র এক দিনের নোটিশে আমাদের সাবেক কর্মস্থল থেকে এখানে এসে যোগ দিতে বলা হয়। এখানে এসে কাউকে পেলাম না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যোগাযোগ করলাম। তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী এখন মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কার্যালয়ে গিয়ে যোগদান করব।’ এদিকে আইসিসিবিতে নির্মিত হাসপাতাল চত্বর ঘুরে দেখা গেছে, চিকিৎসক ও নার্স চেম্বারগুলোর কাজ শেষ। বেডগুলোতে বেডশিট, স্যালাইন হ্যাঙ্গারসহ ডাস্টবিন ও আনুষঙ্গিক সাপোর্ট বসানো হয়েছে। টয়লেট নির্মাণও শেষ। হাসপাতালের এসি, চেয়ারসহ অন্যান্য কাজের ফিনিশিং শেষ।
উল্লেখ্য, করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দিতে সরকারকে আইসিসিবিতে পাঁচ হাজার শয্যার একটি সমন্বিত অস্থায়ী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মতি দিলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল পরিদর্শন করে সেখানে হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। নানা হিসাব-নিকাশ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সেখানে দুই হাজার ১৩ শয্যার হাসপাতাল ও ৭১ শয্যার আইসিইউ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আইসিসিবির সুবিশাল চারটি কনভেনশন হল ও একটি এক্সপো ট্রেড সেন্টারে দেশের অন্যতম বৃহৎ এ হাসপাতালটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে সরকারের স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। কভিড-১৯ বিপর্যয় শেষ না হওয়া পর্যন্ত এবং যত দিন ব্যবহারের প্রয়োজন শেষ না হবে তত দিন সরকারের আইসিসিবিতে স্থাপিত এ হাসপাতালটি ব্যবহার করতে পারবে বলে জানিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ।