মান রুচি ঐতিহ্যের সমাহার বসুন্ধরায়

বিকেল ৫টার দিকেই শোনা গেল, আইটেমটি শেষ। অথচ ইফতারের তখনো অনেক সময় বাকি। দামও কম না! এক হাজার টাকা প্রতি কেজি। ‘বিফ কালো ভুনা’ নেই কেন? খান কিচেনের প্রডাকশন ম্যানেজার হোসেন মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের অর্ধশত আইটেম রয়েছে। কিন্তু প্রথম দিন কেমন বিক্রি হবে সেটা চিন্তা করে কিছু আইটেম কম করেছিলাম। বিফ কালো ভুনা ১০ কেজি এনেছিলাম। ইফতারির প্রায় দুই ঘণ্টা আগেই তা শেষ হয়ে গেছে।’
গতকাল শুক্রবার রোজার প্রথম দিন আইসিসিবিতে (ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টার বসুন্ধরা) ‘পুরান ঢাকার ইফতার বাজার-২০১৮’-
এর চিত্র ছিল এটি। রাজধানীর আইসিসিবির হল-২ পুষ্পগুচ্ছে বসেছে এবারের আয়োজন। এ নিয়ে চতুর্থবার বসন্ধুরা কনভেনশন সেন্টারে ইফতারির হাট জমলো। ৬৪টি স্টলে নানা পসরা নিয়ে হাজির হয়েছেন বিক্রেতারা। প্রথম রোজা থেকে ২৭ রমজান পর্যন্ত চলবে এই ইফতার বাজার। বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। দেশের প্রায় সব নামি-দামি ক্যাটারিং সার্ভিস অংশ নিয়েছে এই আয়োজনে।
খান কিচেন ঘুরে দেখা যায়, বিফ শিক কাবাব বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা, কলাপাতা কোপ্তা কাবাব ১৮০ টাকা, অ্যারাবিক রাইচ খাপচার প্যাকেজ ৩২০০ টাকা, হারিয়ালি কাবাব ১৭০ টাকা, নূরজাহান কাবাব ১৫০ টাকা, মালাইবন্দি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা কেজি হিসেবে। এ ধরনের বহু আয়োজন তাদের।
কথা হয় রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা আরিফ হোসেনের সঙ্গে। তিনি ছেলে আরিয়ানকে নিয়ে এসেছেন ইফতারি কিনতে। আরিফ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘একে তো ছুটির দিন, এরপর আবার বাসার একেবারে কাছেই এত বড় একটি ইফতারির বাজার। তাই বসে থাকতে পারলাম না। বেশ কিছু আইটেমের ইফতার কিনেছি, আরো কিছু কিনব। এখান থেকে আমি আগেও অনেকবার কিনেছি। খাবারগুলো সবই হাইজানিক।’
পুরান ঢাকার ইব্রাহীম ক্যাটারিং সার্ভিসও আইসিসিবি ইফতারি বাজারে হাজির হয়েছে নানা আইটেম নিয়ে। তারা শাহী মাটন কাচ্চি বিরিয়ানি (বাসমতী) ফুল বিক্রি করছে ৩৫০, হাফ ২০০ টাকায়। শাহী মোরগ পোলাওয়ের দামও একই। এক কেজি সাইজ খাসির লেগ রোস্ট বিক্রি করছেন এক হাজার ২০০ টাকা। এই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার হাজি মো. সিরাজ মিয়া বলেন, ‘আমাদের খাবারে পুরান ঢাকার খাবারের স্বাদ পাওয়া যাবে। বিশেষ করে বিরিয়ানি আইটেম বেশি ভালো চলছে।’
ক্রেতা শারমিন আক্তার বলেন, ‘এই ইফতারি বাজারে অনেক কিছুই আছে যা অন্য কোথায়ও পাওয়া যায় না। পুরান ঢাকার ইফতারির বাজারে আমাদের যাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু সেখানকার সব আইটেমও এখানে পাওয়া যাচ্ছে। আর এখানকার খাবারটা স্বাস্থ্যসম্মত এটা সবচেয়ে বড় ব্যাপার। আমি আগে থেকেই এখানে নিয়মিত আসি।’
মাস্টার শেপ সুবরাত আলী ক্যাটারিংয়ে ছিল ক্রেতাদের ভিড়। তারা শিক কাবাব ১৫০, নারগিস কাবাব ৫০, জালি কাবাব ৪০, মোরগ পোলাও ৩০০ ও বিফ তেহারি বিক্রি করছে ২০০ টাকায়। এই প্রতিষ্ঠানের ডিজিএম সারোয়ার হোসেন বলেন, ‘বেচাকেনা খুব ভালো। আমাদের বিশেষত্ব, আমরা কোনো কেমিক্যাল ব্যবহার করি না। আমাদের সব খাবারই ন্যাচারাল। আমরা অন্য কারোর রেসিপিও অনুসরণ করি না।’
হালিম কিনতে অনেকেই ভিড় জমাচ্ছিল ডেভকন মামা হালিমে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক এ আহসান জানান, ‘আমাদের হালিমের দাম পরিমাণভেদে ২০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া আমাদের জুস কর্নার রয়েছে। সেখানে প্রতি গ্লাস হিসেবে আমের জুস ৫০, মালটা ৭৫, তরমুজ ৫০, আনারস ৬০ টাকায় বিক্রি করছি।’
‘এলডোরাডো’ নামের স্টল থেকে বিরাট একটি থালায় বিক্রি করা হচ্ছে ‘ফ্যামিলি ইফতার কাম ডিনার’। দাম দুই হাজার টাকা। এতে আছে হোল ফিস বারবিকিউ, কিমা পোলাও, আচারি খিচুড়ি, কিং পর্ন, চিকেন লেগসহ অনেক আইটেম। এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান রতন বলেন, ‘আমাদের এই প্যাকেজটি ছয়জন মিলে খেতে পারবে। যদিও এর দামটা আরো বেশি, কিন্তু আমরা ডিসকাউন্ট দিয়ে দুই হাজার টাকায় বিক্রি করছি।’
আইসিসিবির এক্সিকিউটিভ অপারেশন মনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘বেচাকেনা বেশ ভালো। আগামীতে আরো ভিড় বাড়বে। ক্রেতা-বিক্রেতা কারো কোনো সমস্যা আমরা এখন পর্যন্ত পাইনি।’