বড় বিনিয়োগে বসুন্ধরা গ্লোব পারটেক্স বোরাক রানার

বড় ধরনের বিনিয়োগে যাচ্ছে দেশের বড় করপোরেটগুলো। ২০১৫ সালে বিনিয়োগ বোর্ডে (বিওআই) এসব বিনিয়োগ নিবন্ধন করেছে তারা। এরই মধ্যে নিবন্ধিত এসব প্রকল্পের কাজ শুরুও হয়েছে। এর মধ্যে কিছু প্রকল্পের কাজ ২০১৭ ও কোনো কোনোটির ২০১৯ সালের মধ্যে শেষ হবে বলে জানা গেছে।
১৯৮৭ সালে আবাসন খাতের মাধ্যমে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করে বসুন্ধরা গ্রুপ। গ্রুপের বিনিয়োগ করা খাতগুলোর মধ্যে আছে আবাসন, গণমাধ্যম ও বিনোদন, খাদ্য ও পানীয়, সিমেন্ট, পেপার, জ্বালানি, সেবা, শিপিং ও লজিস্টিকস এবং এয়ারওয়েজ।
২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠানটি নতুন খাতে বিনিয়োগের পরিকল্পনা নেয়। সে অনুযায়ী নিবন্ধন নিয়েছে বিনিয়োগ বোর্ডে। নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানটির নাম বসুন্ধরা টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড। নিবন্ধনের ঘোষণায় সুতা ও ডায়িং খাতের প্রতিষ্ঠানটির সম্ভাব্য বিনিয়োগের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ১ হাজার ৯৭৭ কোটি ৪১ লাখ ১০ হাজার টাকা। প্রকল্পটির কারখানার ঠিকানা দেয়া হয়েছে নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাট নিউটাউনে। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন সময়সীমা দেখানো হয়েছে ২০১৭ সাল।
যোগাযোগ করা হলে নতুন বিনিয়োগ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা এখনই দেয়া সম্ভব নয় বলে জানান বসুন্ধরা গ্রুপের কর্মকর্তারা। এমনকি টেক্সটাইল খাতে বিনিয়োগের পরিকল্পনা থেকে সরেও আসা হতে পারে বলে জানান তারা। তবে বেশকিছু খাতে বিনিয়োগ পরিকল্পনা আছে, এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন বসুন্ধরা গ্রুপের সিনিয়র অ্যাডভাইজার আবদুর রব রশিদী। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, বসুন্ধরা একটি ক্রমবিকাশমান গ্রুপ। এ অবস্থা আরো টেকসই করতেই নিয়মিত সম্প্রসারণ প্রয়োজন হয়। তাই মৌলিক বেশকিছু নতুন খাতে বিনিয়োগ পরিকল্পনা করছে বসুন্ধরা গ্রুপ।
পারটেক্স গ্রুপের ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু ১৯৫৯ সালে। প্রতিষ্ঠাতা এমএ হাসেমের হাত ধরে যাত্রা করা প্রতিষ্ঠানটি আট বছর ধরে তিন ভাগে বিভক্ত। এগুলো হলো পারটেক্স গ্রুপ, পারটেক্স ও পারটেক্স স্টার গ্রুপ। পারটেক্সের বিনিয়োগ করা খাতগুলোর মধ্যে আছে খাদ্য ও পানীয়, স্টিল, আবাসন, আসবাব, প্লাস্টিক, পেপার, বিদ্যুত্ ও জ্বালানি, পাট, কৃষি, শিপইয়ার্ড, বস্ত্র, নির্মাণ এবং তথ্যপ্রযুক্তি।
বিওআইয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে পারটেক্স পেট্রো লিমিটেড নামের একটি প্রকল্পের নিবন্ধন নেয় পারটেক্স। পেট্রোকেমিক্যাল খাতে সম্ভাব্য বিনিয়োগের পরিমাণ ঘোষণা করা হয়েছে ১ হাজার ৫৭৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা। ২০১৭ সালের মধ্যেই বিনিয়োগ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সময়সীমা বিওআইয়ে উল্লেখ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রকল্পটির কারখানা হবে চট্টগ্রামে কর্ণফুলীর ডাঙ্গারচরে।
পারটেক্স গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে নিবন্ধিত বিনিয়োগ প্রকল্পটির তথ্য নিশ্চিত করেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। তবে প্রকল্পের নির্বাহী পরিচালক দেশে না থাকায় এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
প্রায় ৩০ বছর ধরে দেশে ব্যবসা করে আসছে গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যাল গ্রুপ অব কোম্পানিজ লিমিটেড। ১৯৮৬ সালে ফার্মাসিউটিক্যাল খাত দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগ আছে খাদ্য ও পানীয়, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যে। এসব খাতে প্রতিষ্ঠানটির স্বীকৃত ব্র্যান্ডের মধ্যে আছে ইউরো কোলা, টাইগার, ব্ল্যাক হর্স, ফিজ-আপ ও টিফিন বিস্কুট। প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক টার্নওভার ৭০০ কোটি টাকা।
২০১৫ সালে বিওআইয়ে গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যাল গ্রুপ অব কোম্পানিজ লিমিটেড প্রকল্প নিবন্ধন করেছে ভেজিটেবল অয়েল খাতে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে কারখানা স্থাপনের নির্ধারিত জমি আছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে। মোট বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়া হয়েছে ১ হাজার ১৩১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময়সীমা উল্লেখ করা হয়েছিল চলতি বছরের জানুয়ারির মধ্যে।
প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কর্মকর্তারা জানান, গ্যাস সংযোগসহ আরো কিছু কারণে নির্ধারিত সময়ে বিনিয়োগ বাস্তবায়ন করতে পারেননি তারা। তবে আগামী জুনে শুরু হয়ে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে উত্পাদনে যেতে পারবে প্রকল্পটি। বীজ থেকে শুরু করে তেল উত্পাদন প্রতিটি ধাপই এ প্রকল্পের আওতায় আছে। ইতালির একটি প্রতিষ্ঠান টার্ন কি পন্থায় কারখানা স্থাপন করে দেবে। মূলধনি যন্ত্র আসবে জার্মানি থেকে। এটি বাস্তবায়ন করা হবে স্থানীয় ব্যাংকগুলোর সিন্ডিকেট ঋণসহায়তায়।
প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় জমিসহ সব ধরনের সুবিধা তৈরি আছে। শিগগিরই বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে। আগামী বছরের শুরুর দিকে পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়ে যাবে।
দেশের পাঁচ তারকা হোটেল স্থাপনাসহ বহুতল ভবন নির্মাণে পরিচিত নাম ইউনিক গ্রুপ। ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত এ গ্রুপের উল্লেখযোগ্য নির্মাণের মধ্যে আছে বিলাসবহুল আবাসিক, বাণিজ্যিক ও পাঁচ তারকা হোটেল। গ্রুপের অন্যান্য ব্যবসার মধ্যে আছে জনশক্তি, পর্যটন ও সেবা খাত।
ইউনিক গ্রুপের অন্যতম অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বোরাক রিয়েল এস্টেট লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি বিওআইয়ে নতুন পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণের প্রকল্প নিবন্ধন করেছে। প্রকল্পের স্থান হিসেবে গুলশান এলাকায় একাধিক ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে বিওআইয়ের নিবন্ধনে। মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ঘোষণা আছে ৯৮৩ কোটি ২৩ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। এটি বাস্তবায়নের সময়সীমা উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৯ সালের জুলাইয়ের মধ্যে।
ইউনিক গ্রুপের চেয়ারম্যান নূর আলী বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠান নিয়মিতভাবে বিনিয়োগ সম্প্রসারণ করে। তারই ধারাবাহিকতায় গত বছর আলোচ্য নিবন্ধনটি করা হয়েছে।
দেশের মোটরসাইকেল প্রস্তুত খাতে অন্যতম প্রতিষ্ঠান রানার গ্রুপ। ২০০০ সালে যাত্রা করা প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মী সংখ্যা বর্তমানে ১ হাজার ৮২০। রানার অটোমোবাইলস লিমিটেড ছাড়াও এ গ্রুপের অন্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে রানার মোটরস, রানার সিস্টেম টেকনোলজি, রানার প্রপার্টিজ, রানার ব্রিকস লিমিটেড, রানার এগ্রো প্রডাক্টস লিমিটেড ও বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়।
বিওআইয়ে ২০১৫ সালে বিনিয়োগ নিবন্ধন নেয়া প্রতিষ্ঠানটি হলো রানার অটোমোবাইলস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির মোট বিনিয়োগ দেখানো হয়েছে ৪২২ কোটি ৯ লাখ ৪ হাজার টাকা। মরিশাস ও বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগটি প্রকৌশল খাতের বলে দাবি বিওআইয়ের।
রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান বলেন, গত বছর রানার গ্রুপের ৩০ শতাংশ ইকুইটি কিনেছে সুইডিশ সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ব্রামার অ্যান্ড পার্টনার্স। তাদের মরিশাসের শাখা থেকে আমরা অর্থায়ন সুবিধা নিয়েছি, যার মাধ্যমে রানার গ্রুপের কারখানা উন্নয়নের কাজ করা হয়েছে। নিবন্ধিত এ বিনিয়োগ এরই মধ্যে আমরা বাস্তবায়নও করেছি।