বসছে ফ্লোরম্যাট ও বেড চলছে বিরামহীন কাজ

দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) অস্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হাসপাতাল তৈরির কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে শুধু দিনে নয়, কাজ চলছে রাতেও। এখন ফ্লোরম্যাট বসানো হচ্ছে। এরপর সাজানো শুরু হবে রোগীর বেড, ফার্নিচার; আগেই তৈরি ডাক্তার, নার্স ও সাপোর্টিং স্টাফদের কক্ষগুলো। আইসিসিবির এক্সপো জোন ও তিনটি হলরুমে দুই হাজার ১৩ বেডের আইসোলেশন সেন্টারের পাশাপাশি ৭১ বেডের আইসিইউ ইউনিট থাকবে।
গতকাল মঙ্গলবার এক্সপো জোনে কাজের তদারকি করতে এসে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল হামিদ বলেন, ‘সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার পরও আমাদের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী ছুটি ভোগ করছেন না। সার্বক্ষণিকভাবে আমরা কর্মব্যস্ত রয়েছি, আপ্রাণ চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালের কাজ শেষ করার। হাসপাতালের বেডগুলো চলে আসছে, টয়লেটের কাজগুলোও প্রায় শেষ, ফ্লোরম্যাট বিছানোর কাজ চলছে, ইলেকট্রিক সুইচ বসানোর কাজসহ সব কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। কাজের গতিতে আমরা সন্তুষ্ট।’
আইসিসিবির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা এম এম জসীম উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই হাসপাতাল প্রস্তুতের জন্য দিন-রাত বিরামহীন কাজ চলছে। শেষ হতে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর যে সময় দিয়েছিল তার থেকে দু-তিন দিন বেশি লাগতে পারে। বাইরে থেকে অনেক মালামাল আমদানি করা হচ্ছে, সে কারণেই সময় বেশি লাগছে। কিন্তু কাজ খুব দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। কাজগুলোও দৃশ্যমান হচ্ছে। শেষ মুহূর্তের কাজে কিছুটা সমন্বয় করে এগোতে হচ্ছে তাই সময় বেশি লাগছে। তবে আইসিইউর সরঞ্জাম দেশের বাইরে থেকে আসছে, তাই কিছুদিন দেরি হতে পারে। বসুন্ধরার পক্ষ থেকে আমরা সার্বিকভাবে সহায়তা করে যাচ্ছি, যখন যা প্রয়োজন হচ্ছে।’
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, আইসিসিবির এক্সপো জোনে পুরোদমে ফ্লোরম্যাট বসানোর কাজ চলছে। ডাক্তার, নার্স ও সাপোর্টিং স্টাফদের কক্ষগুলো তৈরি করা হয়ে গেছে। স্তূপ করে রাখা আছে রোগীর বেড ও ফার্নিচারগুলো। এয়ারকন্ডিশন লাগানো হয়ে গেছে। দুই হাজার ৫০০ কিলোওয়াটের সাবস্টেশন এবং জেনারেটর বসানো হয়েছে। টয়লেট সুবিধা নির্মাণসহ হাসপাতাল তৈরির বিভিন্ন কাজ করছেন শ্রমিকরা। সিসি ক্যামেরাও স্থাপন করা হবে, যেন রোগীদের সার্বক্ষণিক মনিটর করতে পারেন ডাক্তার ও নার্সরা।
জানা যায়, গত ১২ এপ্রিল থেকে আইসিসিবিতে অস্থায়ী হাসপাতালের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ১৫ দিনের মধ্যেই আইসিসিবিকে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালে রূপ দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছিল স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। এ হিসাবে আগামী ২৭ এপ্রিলের আগেই হাসপাতালের সব কাজ সম্পন্ন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে হস্তান্তর করার কথা। দিন-রাত কাজ হচ্ছে। তার পরও যুক্তিসংগত নানা কারণে দু-এক দিন সময় বেশি লাগতে পারে।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশের এই ক্রান্তিকালে এগিয়ে এসেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ১০ কোটি টাকা দেওয়ার পাশাপাশি সরকারকে আইসিসিবিতে পাঁচ হাজার শয্যার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেয় দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা। এরপর প্রধানমন্ত্রীর সম্মতিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সেনাবাহিনীর একটি দল আইসিসিবি পরিদর্শন করে। পরে এটাকে অস্থায়ী হাসপাতাল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। নানা হিসাব-নিকাশ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সেখানে দুই হাজার ১৩ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার স্থাপনের কাজ করছে। এর বাইরে সেখানে হবে ৭১ বেডের আইসিইউ ইউনিট। আইসিসিবির সুবিশাল চারটি কনভেনশন হল ও একটি এক্সপো জোন, দেশের অন্যতম বৃহৎ এ হাসপাতালের নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। যত দিন এ মহামারি থাকবে এবং সরকারের যত দিন ব্যবহারের প্রয়োজন শেষ না হবে তত দিন আইসিসিবিকে ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়েছে।