বঙ্গবন্ধু কাপ চ্যাম্পিয়ন শেখ রাসেল

মুক্তিযোদ্ধা আছাদুজ্জামান স্টেডিয়ামের গ্যালারি কানায় কানায় পূর্ণ, মাঠের বাইরেও অপেক্ষমাণ হাজার হাজার দর্শক। বসুন্ধরা সিমেন্টের পৃষ্ঠপোষকতায় মাগুরায় বঙ্গবন্ধু কাপের ফাইনাল নিয়ে কাল উন্মাদনা ছিল তুঙ্গে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সেই ফাইনালে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে টাইব্রেকারে হারিয়ে শিরোপা জিতে নিয়েছে দেশের শীর্ষ সারির দল শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র। নির্ধারিত সময়ের খেলা গোলশূন্য থাকার পর শ্যুট আউটে ৫-৪ ব্যবধানে জয় শেখ রাসেলের। ফাইনালের প্রধান অতিথি যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদারের হাত থেকে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি নিয়েছে তারা। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন শেখ রাসেলেরই অরুপ কুমার বৈদ্য।
এই আসরে আবাহনী, মোহামেডানের মতো দল খেলেছে, নৌবাহিনীও বেশ কয়েকজন জাতীয় দলের খেলোয়াড় এবং বিদেশিদের নিয়ে দারুণ শক্তিশালী। প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন আবাহনীকে হারিয়ে তারা ফাইনালে ওঠে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট শেখ রাসেলেরই। টুর্নামেন্টের কোয়ার্টার ফাইনালে চুয়াডাঙ্গা শুভ সকাল দলকে হারায় তারা ৪-১ গোলে। সেমিফাইনালে মোহামেডানের বিপক্ষে ২-০ গোলে এগিয়ে থাকা অবস্থায় তারা আপত্তি তোলে প্রতিপক্ষের দুই অবৈধ খেলোয়াড় নিয়ে। তা আমলে নিয়ে টুর্নামেন্টের বাইলজ অনুযায়ী শেখ রাসেলকেই জয়ী ঘোষণা করা হয়। কাল ফাইনালে নৌবাহিনীর বিপক্ষে তাদের ম্যাচ হয়ে ওঠে আকর্ষণীয় ফুটবলের বিজ্ঞাপন। দুই দলই গোলের সুযোগ তৈরি করে। তবে মাঠে তুলনামূলক প্রাধান্য ছিল শেখ রাসেলের। এলিটা বেঞ্জামিন ও দাউদা সিসে শুরুতে গোলের দুটি ভালো সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে শেষ মুহূর্তে ইয়োকো সামনিকের হেড অসাধারণ দক্ষতায় ফিরিয়ে দিয়েছেন নৌবাহিনী গোলরক্ষক শহীদুল আলম। এর আগে সোহেল রানার শটে দুর্দান্ত সেভ ছিল শেখ রাসেল গোলরক্ষক জিয়াউর রহমানেরও। তাতে গোলশূন্যভাবেই শেষ হয় নির্ধারিত সময়ের খেলা। ফুটবলের প্রাণ হলো গোল, কিন্তু কাল গোল না হলেও দুই দলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইও প্রাণভরে উপভোগ করেছেন স্থানীয় দর্শকরা। টাইব্রেকারের উত্তেজনা শেষে শেখ রাসেলের বিজয়োৎসব দেখে ঘরে ফিরেছেন তারা।
টাইব্রেকারে শেখ রাসেল পাঁচটি শটের পাঁচটিতেই একে একে গোল করেছেন বেঞ্জামিন, সিসে, ইয়োকো, সাইমন ও অরুপ বৈদ্য। নৌবাহিনীর হয়ে তৃতীয় শটটি মিস করেন অগাস্টিন ওয়ালসন। এরপর আর তারা পেরে ওঠেনি। শেখ রাসেল যে সুযোগই দেয়নি। এমন একটি আসরের শিরোপা জিততে পেরে গর্বিত শেখ রাসেলের কোচ ও জাতীয় দলের সাবেক তারকা শফিকুল ইসলাম মানিক, ‘এটি স্থানীয় একটি টুর্নামেন্ট হলেও শেখ রাসেল, আবাহনী, মোহামেডান, নৌবাহিনীর মতো দল এই আসরের জৌলুস বাড়িয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো উপচে পড়া দর্শক ছিল এখানে প্রতিটি ম্যাচে। এমন একটি আসরে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করাটা সত্যিই গৌরবের।’ ফাইনাল শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার বিজয়ী দলকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রশংসা করেছেন স্থানীয় পর্যায়ে এমন জাঁকজমকপূর্ণ ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের, ‘বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের খেলা ফুটবল। আছাদুজ্জামান স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে আসা দর্শকরা আবারও তা প্রমাণ করেছে। তাতে সার্থক হয়েছে এই আয়োজন।’ আয়োজক আছাদুজ্জামান ফুটবল একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সহকারী সচিব অ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর তাঁর বক্তৃতায় বসুন্ধরা গ্রুপ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন টুর্নামেন্টে সহযোগিতার জন্য। ফাইনাল খেলা শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, সাবেক কৃতী ফুটবলার আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু, বাদল রায়, মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তানজেল হোসেন খান, মাগুরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পংকজ কুমার কুন্ডু, পৌর মেয়র খুরশিদ হায়দার টুটুল, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান রুস্তম আলী, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মকবুল হোসেন, টুর্নামেন্টের আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান লাজুক ও আছাদুজ্জামান একাডেমির সভাপতি ফরিদ হোসেন।