কয়েক দিনের মধ্যেই হাসপাতালে রূপ নেবে আইসিসিবি

ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) নির্মাণাধীন দেশের বৃহত্তম করোনা আইসোলেশন সেন্টারে এখন চলছে পিভিসি ফ্লোরম্যাট বসানোর কাজ। গতকালের মধ্যেই কাজটি শেষ হওয়ার কথা। দেড় লাখ বর্গফুটের এক্সপো ট্রেড সেন্টারটিতে ফ্লোরম্যাট বসানো হলেই সাজানো শুরু হবে রোগীর বেড, ফার্নিচার, চিকিৎসক ও নার্সদের বহনযোগ্য কক্ষগুলো। এর পরই করোনা আক্রান্তের চিকিৎসায় দেশের বৃহত্তম হাসপাতালে রূপ নেবে আইসিসিবি। কোভিড-১৯ বিপর্যয় শেষ না হওয়া পর্যন্ত এবং সরকারের যত দিন প্রয়োজন শেষ না হবে তত দিন আইসিসিবিকে ব্যবহারের জন্য দেয়া হয়েছে।
১৫ দিনের মধ্যে আইসিসিবিকে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালে রূপ দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে গত ১২ এপ্রিল কাজ শুরু করেছে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুদুল আলম বলেন, আইসিসিবির ট্রেড সেন্টারটি অনেক বড় জায়গা। ফ্লোরম্যাট বসানোর কাজ মঙ্গলবারের মধ্যে হয়ে যাবে। এর পরই ডক্টর চেম্বার, নার্স চেম্বার, ওয়ার্ক স্টেশন এগুলো লে-আউট করে ফার্নিচার বসানো শুরু করব। নির্ধারিত সময়ের আগেই হাসপাতালটির নির্মাণকাজ শেষ করতে পারব বলে আমরা আশাবাদী। আমাদের ইচ্ছা ২৩ এপ্রিলের মধ্যে শেষ করা। তারপরও নানা কারণে দু-এক দিন সময় বেশি লাগতে পারে। তিনি জানান, হাসপাতালে মোট আইসোলেশন বেড হবে ২ হাজার ১৩টি। ট্রেড সেন্টারে ছয় ক্লাস্টারে ১ হাজার ৪৮৮টি বেড বসবে। এ ছাড়া তিনটি কনভেনশন হলে থাকবে আরো ৫২৫টি বেড। এর বাইরে ৪ নম্বর হলে হবে ৭১ বেডের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ)।
আইসিসিবির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা এম এম জসীম উদ্দিন বলেন, লকডাউন পরিস্থিতিতে মালামাল আনা, শ্রমিক আনা কঠিন ব্যাপার। তার পরও এই কয়দিনে হাসপাতালটির নির্মাণকাজ যে পর্যায়ে এসেছে তা সন্তোষজনক। ডক্টর ও নার্সদের বহনযোগ্য কক্ষগুলো তৈরি করে এক পাশে রাখা হয়েছে। পিভিসি ম্যাট বসানো হলেই এগুলো এনে সেটআপ করা হবে। ১৬০০ টন এয়ারকন্ডিশনার বসানো হয়ে গেছে। এগুলোয় বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে আড়াই হাজার কেভিএর একটি সাবস্টেশন বসানো হয়েছে। জেনারেটরও বসানো হয়েছে। আশা করছি তিন-চার দিনের মধ্যে হাসপাতালটি পরিচালনের উপযোগী হবে। তিনি বলেন, একটা কর্পোরেট গ্রুপ হিসেবে মানুষের সঙ্গে মানসিক সম্পৃক্ততা থেকেই বসুন্ধরা গ্রুপ এমন একটা মহৎ কাজে এগিয়ে এসেছে। যেভাবে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তাতে হাসপাতালটি সময়ের প্রয়োজন ছিল। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান সেটা আগেই বুঝতে পেরে সরকারকে এখানে হাসপাতাল করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এটা যে এত বড় একটা কর্মযজ্ঞ, কাজে নামার আগে বুঝতে পারিনি। যেখানে বড় সরকারি হাসপাতালে সাধারণত ৪০০ বেডের ওপরে দেখা যায় না, সেখানে একটা ফ্লোরের ওপরে ১৫০০ বেড যেনতেন বিষয় নয়। এর ব্যবস্থাপনায় অনেক বড় লজিস্টিক সাপোর্টের বিষয় আছে। আমরা সেটা দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর হাসপাতালটি তৈরি করছে। আমরা নানাভাবে সহযোগিতা করছি। দেড় লাখ বর্গফুট জায়গায় অস্থায়ী ছাউনি তৈরির মতো এত বড় তাঁবু বাংলাদেশে নেই। আশপাশের দেশেও নেই। আমরা এটি মালয়েশিয়া থেকে এনেছি। বসুন্ধরার ম্যানেজমেন্টের নির্দেশে নিজেদের লোক দিয়ে তাঁবুর ব্যবস্থাপনা করাচ্ছি। কোনো বাণিজ্যিক কার্যক্রম না থাকার পরও বসুন্ধরার দেড়-দুই শ’ মানুষ সবসময় এখানে কাজ করছে। উল্লেখ্য, করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দিতে সরকারকে আইসিসিবিতে ৫ হাজার শয্যার একটি সমন্বিত অস্থায়ী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মতি দিলে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল পরিদর্শন করে হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ নেয়।